বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংসতার ঘটনায় ১ হাজার ৫৮১ নিহত হয়েছেন। এছাড়া আয়নাঘর, দুর্নীতিসহ অব অপকর্মের দায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও অন্যদলের নেতারা। 

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, ‘বিগত ১৬-১৭ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশটা ভালো চলে নাই। এ দেশ আওয়ামী লীগ সরকারের ছিল না এবং মানুষের সরকার ছিল না। এ দেশ ছিল শেখ হাসিনা সরকারের। এ দেশে যত অন্যায় হয়েছে তার ৯০ ভাগ শেখ হাসিনা নিজে করেছেন। আর ১০ ভাগ অপরাধ যারা করেছেন তাঁরা বাধ্য হয়ে করেছেন। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের করের বেতকায় নিহত সেনা সদস্য তানজিম সারোয়ার নির্জনের বাসায় তাঁর স্বজনদের সঙ্গে সমবেদনা ও সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব বলেন।

কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশটা কেমন যেন হয়ে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। যে দেশে একজন সেনা কর্মকর্তাকে এভাবে ডাকাতদল হামলা চালিয়ে হত্যা করতে পারে তাহলে বুঝতে হবে সমাজে কিছু নেই, আইন কানুন বলতে কিছু নেই। সেনাবাহিনীর পোশাক পরা এক মানুষের গায়ে দুষ্কৃতকারীরা যখন আঘাত করে পারে তাহলে বুঝতে হবে দেশে আইনশৃঙ্খলা বলে অথবা দেশে শাসন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যে শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং দুষ্ট লোকের যে ভয় থাকে তা কিছুই নেই। সমাজটাকে বদলাতে হবে। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ ছাড়া দায় স্বীকার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আলোচিত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান। এ বিষয়ে যুগান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

দেশে অরাজকতা ও রাজনৈতিক সহিসংতা সৃষ্টির নেপথ্যে কার কী ভূমিকা ছিল সে বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শুরুতে তারা সাবেক স্বরাষ্ট্র ও সাবেক সেতুমন্ত্রীর ওপর দায় চাপান। পরে দায় চাপাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

তারা বলছেন, ‘আমরা কেবল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছি।’ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে তারা যেসব পরিকল্পনা করেছেন সেগুলো বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে হুকুম দিয়েছেন বলে এরই মধ্যে স্বীকার করেছেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে তাদের দায় স্বীকার করলেও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা।

জিয়াউল হক বলেছেন, ‘আমি তো কোনো ইউনিটের ইনচার্জ ছিলাম না। আমি সরকারে টপ অর্ডারের নির্দেশে কাজ করেছি।’ তার কাছে তদন্তসংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার)-এর মহাপরিচালক ছিলেন। আড়ি পেতে মানুষের প্রাইভেসি নষ্ট করেছেন। আপনার নির্দেশেই বিরোধী মতের অনেককে আয়নাঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছেন অনেকে।’ তখন বলেন, ‘আমি তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করেছি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। যে আয়নাঘরের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমাকেও আট দিন রাখা হয়েছে। এরপর আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।’

সালমান এফ রহমান ডিবিকে বলেছেন, আন্দোলনের সময় আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, দেশের মানুষ আমাদের ওপর খেপে যাচ্ছেন। তিনি পাত্তা দেননি। ছাত্র অন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন শেখ হাসিনা আমাকে প্রশ্ন করেন, ‘পুলিশ এতো ভালো কাজ করছে। সেনাবাহিনী কেন পারছে না। এ সময় আমি বিষয়টি নিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেই।’

ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আসামি সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, সরকার পতনের একদফা অন্দোলনের শেষ পর্যায়ে ৪ আগস্ট গণভবনে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছি, প্রয়োজনে আমাকে বলি দিন। তারপর শিক্ষার্থীদের অন্দোলন বন্ধ করুন। তাদের চোখের ভাষা, মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন। এ সময় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাকে তেড়ে মারতে আসেন। তখন আমি সাহসী হয়ে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনি স্টেপ ডাউন করুন।

news