২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় চলছে শোরগোল। বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের একাধিক পোস্ট এই কৌতূহলকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
“একদিন পরই ৩১ ডিসেম্বর। তবে এই তারিখ ঘিরে কৌতূহল শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে, যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একের পর এক পোস্ট দিয়ে দিনটি নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিতে থাকেন।
আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘Comrades, 31st DECEMBER! Now or Never.’ আরেক নেতা রিফাত রশিদ লিখেছেন, ‘All eyes on 31st December, 2024. Now or Never!’”
“পোস্টগুলো দেখে অনেকেই ভাবছেন, ৩১ ডিসেম্বর হয়তো কোনো বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি আসতে চলেছে। তবে এটি কি শুধুই বর্ষবিদায় নাকি এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে।
“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও পোস্ট করেছেন। তার বার্তায় লেখা, ‘Comrades, Now or Never.’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন লিখেছেন, ‘এ বছরই হবে। ৩১ ডিসেম্বর। ইন শা আল্লাহ।’
এই পোস্টগুলো দেখে বোঝা যায়, বর্ষবিদায়ের কোনো সাধারণ উদযাপন নয়, বরং এটি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে সেই কর্মসূচি কী, তা প্রথম দিকে পরিষ্কার ছিল না।”
“জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। আর এই পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এমন পোস্ট নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।”
“তবে রবিবার সন্ধ্যায় দুটি নতুন পোস্টে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়। আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হবে একটি বিশেষ ঘোষণা অনুষ্ঠান।
ঢাকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সমন্বয়কদের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা হয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ‘জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই ঘোষণাপত্রে থাকবে আন্দোলনের মূল কারণ, স্বৈরাচারী শাসনের পতন থেকে নতুন শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে দিকনির্দেশনা।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেনম “শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী আমল থেকে দেশ কেন জুলাই বিপ্লবের দিকে এগিয়ে গেল, আমাদের ৯ দফা থেকে ১ দফায় কেন আসতে হলো, ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা কী ছিল—এসব নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর আমরা জনগণের সামনে প্রকাশ করব।”
“৩১ ডিসেম্বর খ্রিস্টীয় বছরের শেষ দিন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বার্তা থেকে স্পষ্ট, এটি কোনো বর্ষবিদায়ের উদযাপন নয়।”
“জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের দাবি, ছাত্র-জনতার সমর্থনে একটি নতুন গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি হয়েছে, যা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে।
৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্রে থাকবে কীভাবে এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তারা কোন পথে এগোবে।”
“অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে একের পর এক পরিবর্তন এসেছে। এই ঘোষণাপত্র কি সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা, নাকি এটি নতুন কোনো আন্দোলনের সূচনা করবে।”
“কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইতোমধ্যেই প্রস্তুতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আন্দোলনের সমর্থকরা সেখানে জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। ৩১ ডিসেম্বরের এই কর্মসূচি শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য নয়, দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।”
“৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কী ঘোষণা আসবে, তা জানার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এই ঘোষণা কি নতুন বছরের জন্য একটি নতুন সূচনা হবে?”