ঢাকার সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোর একটি সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে ১০ ঘণ্টা। তবে এই অগ্নিকাণ্ড শুধু ক্ষয়ক্ষতি নয়, তৈরি করেছে ষড়যন্ত্রের প্রশ্ন।
“বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগে। দমকল বাহিনীর সদর দপ্তর খুব কাছেই হওয়ায় তাদের ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে, ফটক দিয়ে ফায়ার ট্রাক প্রবেশ করতে সমস্যা হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, আগুনটি ভবনের ৬, ৭, ৮ ও ৯ তলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। কাঠের আসবাবপত্র ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী আগুন ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করেছে।”
“এই অগ্নিকাণ্ডকে কীভাবে দেখা হচ্ছে? দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত? সচিবালয়ে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে পারে কীভাবে।”
“ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বিদ্যুৎ লাইনের শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুন লাগতে পারে। তবে তারা এখনও নিশ্চিত কিছু জানায়নি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা করা হচ্ছে।
কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সময় এবং ভবনের সুরক্ষা ব্যবস্থার গলদ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। একজন ফায়ার ফাইটার সোয়ানুর জামান নয়ন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ঘটনাও ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।”
“সচিবালয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকা ভবনে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনাও শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা চলছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ জোরালো হয়েছে।”
“অগ্নিকাণ্ডের পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুকে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের তদন্তের কাজ ব্যাহত করতেই এই আগুন লাগানো হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।’
অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে দুটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন আসিফ মাহমুদ। ঘটনার পরপরই তিনি নীলফামারী থেকে ঢাকায় ফিরে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।”
“বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমও সরাসরি আওয়ামী লীগের সাবেক সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছেন। তার মতে, এটি পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতির নথি ধ্বংস করার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
“সচিবালয়ে আগুনের জেরে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর নেতৃত্বে রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব। কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিন দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে। সরকার বলছে, এই ঘটনার প্রকৃত কারণ বের করতে তারা বদ্ধপরিকর।”
“সচিবালয়ে এমন একটি সুরক্ষিত ভবনে কীভাবে আগুন লাগতে পারে? নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি যথাযথ ছিল? অষ্টম তলায় কুকুরের মৃতদেহ পাওয়া, কিংবা বড় ফায়ার ট্রাকের প্রবেশে বাধা—এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে তদন্ত রিপোর্টের।”
“সাবেক ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান মনে করেন, এটি পরিকল্পিত নাশকতার অংশ। তার মতে, একাধিক স্থানে একসঙ্গে আগুন লাগা এবং ভবনের গুরুত্বপূর্ণ নথি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সন্দেহজনক।”
“এখন প্রশ্ন উঠছে, এই তদন্ত প্রতিবেদন কি আলোর মুখ দেখবে? নাকি পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর মতো এটি হারিয়ে যাবে?”