রাশিয়ার ওপর ষষ্ঠ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রশ্নে একমত নয় ইইউ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেফ বোরেল বলেছেন: রাশিয়ার বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দফা নিষেধাজ্ঞার আরোপের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। গতকাল ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন-তাঁর ভাষায়-আমরা রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত নই। ইউরোপের ২৭ টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল (সোমবার) রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধসহ দেশটির বিরুদ্ধে ষষ্ঠ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু হাঙ্গেরির নেতৃত্বে কয়েকটি দেশের তীব্র বিরোধিতার কারণে নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি। এর আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাঁচবার বিভিন্ন খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি হচ্ছে ষষ্ঠ দফার নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ। জোসেফ বোরেল স্বীকার করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষেই জটিল অবস্থার মুখোমুখি রয়েছে কারণ তারা ভূমিবেষ্টিত দেশ হওয়ার কারণে রাশিয়ার পাইপ লাইনের মাধ্যমে আনা তেল ও গ্যাসের ওপর তাদের একমাত্র ভরসা। এ কারণে  ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একমত হতে পারছে না। হাঙ্গেরি তাদের শতকরা ৬৫ ভাগ তেল রাশিয়া থেকেই আমদানি করে। হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া এবং বুলগেরিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো অনেক বেশি মাত্রায় রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরশীল। হাঙ্গেরি সরকার বলছে, রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে তাদের অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে।

রাশিয়ার ওপর ষষ্ঠ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশেরই ইতিবাচক রায় প্রয়োজন। ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেলসহ সকল পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানি বন্ধ করতে হবে। সেইসঙ্গে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ব্যাংক এসবার ব্যাংককে সুইফট সিস্টেম থেকে বাদ দিতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে হাঙ্গেরি নিষেধাজ্ঞার তীব্র বিরোধিতা করেছে। বুদাপেস্টের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে জোসেফ বোরেল বলেছেন: আজকের আলোচনা থেকে হাঙ্গেরির বেশ কিছু সমস্যা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিয়ার্তো গত বুধবার বলেছিলেন: হাঙ্গেরি রাশিয়ার তেলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে তখনই মত দেবে যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের সুস্পষ্ট উপায় নির্দেশ করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তার সরকার তেলের দামের তীব্র বৃদ্ধির পক্ষে নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তা ছাড়া রাশিয়ান তেলের বিকল্প চিন্তা করারও সুযোগ নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকৃতপক্ষে হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার খুবই ঘনিষ্ঠ অংশীদার। দেশটি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যয় কমাতে এই ইউনিয়নের কাছ থেকে কোটি কোটি ইউরো দাবি করেছে।

লিথুনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিউস ল্যান্ডবার্গিস বলেছেন: দু:খজনকভাবে পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি দেশের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। হাঙ্গেরির প্রতি ইঙ্গিত করে ল্যান্ডসবার্গিস আরও বলেন: ওই একটিমাত্র দেশের কারণে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছতে পারছি না। আমাদের স্বীকার করতেই হবে একটিমাত্র সদস্য দেশের কাছে পুরো ইউনিয়ন আটকে গেছে।  

সুতরাং এটি পরিষ্কার হয়ে গেছে যে রাশিয়ার ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং তার পরিণতি সম্পর্কে ইইউভুক্ত দেশগুলির মধ্যে কোনও ঐকমত্য নেই।

মার্কিন স্বার্থে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেওয়ার বিষয়টিও যৌক্তিক বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা।খরব পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news