ইরাক-সিরিয়ায় অব্যাহত তুর্কি-দখলদারিত্ব এবং ইসরাইল ও পাশ্চাত্যের প্রতি এরদোগানের বিনম্রতা!

ইরাকের ভেতরে তুরস্কের সেনা-অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সর্ব-সাম্প্রতিক তুর্কি অভিযানে তুর্কি কুর্দিস্তানের ওয়ার্কার্স পার্টি বা পিকেকে'র ৬ সেনা নিহত হয়েছে। তুর্কি সরকার উত্তর ইরাকে এই অভিযানের কথা উল্লেখ করেছে। 

কুর্দি গেরিলাদের দমনের অজুহাত দেখিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে ইরাক ও সিরিয়ায় জোরালো সেনা-তৎপরতা চালিয়ে আসছে তুর্কি সরকার। একই অজুহাতে ইরাক ও সিরিয়ায় অবৈধভাবে ভূখণ্ডও দখল করে রেখেছে এরদোগানের নেতৃত্বাধীন তুর্কি সরকার। দামেস্ক ও বাগদাদের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও তুরস্কের এসব বলদর্পি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

 সম্প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তুরস্কের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে বাগদাদ।  বাগদাদ ও দামেস্ক সরকার নিরাপত্তা পরিষদে তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রায়ই এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলো এসব অভিযোগকে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। সম্প্রতি এই পরিষদে তুরস্কের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাবে তুর্কি প্রেসিডেন্ট উত্তর ইরাকে কয়েকজন তুর্কি সেনা নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আঙ্কারা তার সেনাদের রক্ত পদদলিত হতে বা বৃথা যেতে দেবে না! 

ইরাক ও সিরিয়ায় কুর্দি গেরিলাদের ওপর প্রায়ই  সেনা-অভিযান চালানোর কারণে ও দেশ দু'টির বিশাল ভূখণ্ড দখল করে রাখার কারণে এ দুই দেশেই তুরস্কের বিরুদ্ধে সরকার ও রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ জনগণের মধ্যেও ক্ষোভ ক্রমেই বিস্ফোরন্মুখ হয়ে উঠছে। ইরাকি সংসদের একটি বড় রাজনৈতিক জোটের অন্যতম সদস্য মাহদি তাক্বি ইরাক থেকে তুর্কি সেনা বিতাড়নের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, বাগদাদের নেতৃবৃন্দের ও বিশ্ব সমাজের নীরবতার কারণে তুরস্ক ইরাকে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ও তা জোরদার করে দিনকে দিন ইরাকি ভূখণ্ডের ওপর দখলদারিত্বের পরিধি ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে।

গত কয়েক বছর ধরে বাগদাদের নেতৃবৃন্দ মনে করতেন যে তুর্কি সেনারা পিকেকে গেরিলাদের ওপর দমন অভিযান শেষ করে আবারও নিজের সীমান্তে ফিরে যাবে! তাই তারা এ বিষয়ে তেমন একটা উচ্চবাচ্য করেননি। কিন্তু সিরিয়া ও ইরাকে তুর্কি অভিযানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এ দুই দেশের ভূখণ্ড ত্যাগ করার বা ছেড়ে দেয়ার কোনো ইচ্ছে তুর্কি সরকারের নেই। তাই  দামেস্ক ও বাগদাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।

তুর্কি সরকার যদিও বলছে যে সিরিয়া ও তুরস্কের ভূখণ্ডের ওপর আঙ্কারার কোনো লোভ নেই কিন্তু তা সত্ত্বেও এই দুই দেশের ভেতরে বিপুল সংখ্যক সেনা ঘাঁটি নির্মাণ ও সামরিক সাজ-সরঞ্জাম মোতায়েন থেকে বোঝা যায় তুর্কি সরকারের আসল মতলব সন্দেহজনক। তুর্কি সেনা অভিযানে কেবল তুর্কি সেনা ও কুর্দি গেরিলারা হতাহত হচ্ছে বলে আঙ্কারা দাবি করলেও বাস্তবে ইরাক ও সিরিয়ার বহু বেসামরিক নাগরিকের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এসব অভিযানে যা উল্লেখ করছে না তুর্কি সরকার। তুর্কি অভিযানে  হতাহত হওয়ার ও সম্পদ হানির মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকায় তুর্কি সরকার ইরাক ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা অভিযান জোরদারে বেশি উৎসাহী হয়েছে। মার্কিন সরকার ও ইউরোপীয় জোট তুরস্ককে তাদের কৌশলগত মিত্র বলে উল্লেখ করলেও তুরস্কের ঘরোয়া ও আঞ্চলিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে তারা কুর্দি পিকেকে গেরিলাদেরই মূল সহযোগী। বর্ণবাদী ইসরাইলও পশ্চিমাদের মতই কুর্দি গেরিলাদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে। অথচ তুর্কি সরকার পাশ্চাত্য ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চ-বাচ্য না করে কেবল সিরিয়া ও ইরাকেই তার বীরত্ব প্রদর্শনে সচেষ্ট।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news