বৈশ্বিক উষ্ণায়নে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারগুলো ভোক্তাদের পক্ষ নেয়: গবেষণা

প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তিনজন মার্কিন অর্থনীতিবিদ বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা এখন আর বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে না বরং রাষ্ট্রগলোর হস্তক্ষেপের ওপর তা নির্ভর করে। 

১৯৮০ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৮১ দেশের ৮০টি ফসলের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তারা গবেষণা করে দেখেন, ধনী-গরীব সকল সরকারই তাপদাহ বা উষ্ণ জলবায়ুর কারণে ফসলের ক্ষতি হলে তারা ভোক্তাদের নানা রকম সহায়তা দেয়। সে সময় সরকারেরা উৎপাদকের পাশে থাকে না। গবেষণাটি করেছেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তিনজন গবেষক হলেন অর্থনীতিবিদ এলান হিসাও, কার্ত্তিক শাস্ত্রী এবং জ্যাকব মসকোনা।

উষ্ণ বিশ্বে খাদ্য নীতি” নামের এই গবেষণাপত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ তাদের ওয়বসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। 

২০২২ সালে ভারতে গম কম উৎপাদনের প্রেক্ষিতে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া, পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক পাম তেল, ভারত ও মিয়ানমার কর্তৃক চাল এবং স্পেন ও তুরষ্ক জলপাই তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার সমালোচনা করেন এই ত্রয়ী। 

তারা বলেন, নির্বাচনের আগে সরকারগুলোর ভোক্তাদের পক্ষ নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। এই গবেষণার জন্য তারা যে ফসলগুলি অন্তর্ভুক্ত করেন সেগুলো হল চাল, গম, ভুট্টা, সয়াবিন, টমেটো, আলু এবং পেঁয়াজ। অর্থকরী ফসলের মধ্যে ছিল কোকো, কফি, তুলা, পাম তেল, চিনি এবং তামাক।

জলবায়ু উষ্ণায়নের কারণে সরকার দেশের খাদ্য মূল্য ও সরবরাহ ঠিক রাখতে যেসব প্রতিকার নেয়, তাতে করে স্থানীয় বাজারে খাদ্যমূল্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৭.২ শতাংশ কমে যেতে পারে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে ভোক্তাদের ক্ষতি ৯৭ শতাংশ হ্রাস পায় তবে দেশীয় উৎপাদক ও বিদেশী ভোক্তাদের আর্থিক ক্ষতি বাড়তে পারে যথাক্রমে ৫৫ এবং ১০৫ শতাংশ। 

এই গবেষকরা নীতি প্রণেতাদের সতর্ক করে বলেছেন, যদি সরকারগুলি জলবায়ু-উষ্ণায়নের প্রভাবে খাদ্য নীতি পরিবর্তন করেন এবং বাণিজ্য সীমাবদ্ধ করেন তবে তা বিশ্বজুড়ে প্রয়োজনীয় খাবারের ঘাটতি এবং মূল্য বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই অবস্থা চলতে থাকে, তবে বাণিজ্যের মাধ্যমে ভোগ বাড়ানোর যে অর্থনৈতিক তত্ত্ব দেয়া হয়েছে যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, তারও ভিত নড়ে যেতে পারে। কেননা, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর শিকার হবে প্রায় সব দেশ। 

জলবায়ু পরিবর্তনের যে ধারা শুরু হয়েছে তার বরাত দিয়ে ঐ তিনজন গবেষক লিখছেন, জলবায়ু মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে আমরা ২০৯১ থেকে ২১০০ পর্যন্ত অনুমানিত প্রভাবগুলো অধ্যয়ন করার জন্য এই নমুনাটি প্রামাণ্য ধরে নিতে পারি । সাময়িকভাবে ভোক্তাদের উপকার করলেও এধরণের নীতি মোটের ওপর বিশ্ববাসীর মোট কল্যাণের ক্ষতিকে ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক  এমএম আকাশ আমাদের নতুন সময়কে বলেছেন, সরকার ভোক্তাদের পক্ষ নেয়- এই কথাটির সঙ্গে আমি একমত নই। বাংলাদেশে উৎপাদকদের সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণে ভর্তুকি দেওয়া হয়।  সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি 

news