ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরু, সর্বোচ্চ ভোট দেওয়ার আহবান খামেনির 

পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ইরানের নাগরিকদের নির্বাচন বয়কটের আহবান জানানো হলেও দেশটিতে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইরানে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসির মৃত্যুর পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

সর্বোচ্চ সংখ্যক’ ভোটারকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের ধর্মীয়য় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি। গত চার বছরে দেশটিতে বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি কমে গেছে। ভোটহগ্রহণ শেষে চূড়ান্ত ফলাফল আগামী দুই দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর যদি দেখা যায়, কোনও প্রার্থীই শূন্য ভোটসহ কমপক্ষে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জিততে পারেনি, তবে ফল ঘোষণার প্রথম শুক্রবার শীর্ষ দুই প্রার্থীর মধ্যে রান-অফ রাউন্ডের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

আইআরআইবি’কে এক ইরানি নাগরিক বলেন, আমরা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থীকে নির্বাচন করতে চাই। পশ্চিমের এই সমস্ত বিশ্বাসঘাতক এবং দালালরা যা খুশি তাই বলতে পারে, আমরা তাদের পাত্তা দিই না। 

নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিবর্তে, ইরানিরা কাকে ভোট দেবেন তা নিয়ে ব্যস্ত। আরেকজন ইরানি নারী ভোটার বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য একজন ইরানি হিসেবে আমি দায়িত্ববোধ অনুভব করি। যদিও আমি এখনও আমার ভোটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি, আমি জানি শুক্রবার সকালের মধ্যে আমাকে আমার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হচ্ছে দুই রক্ষণশীল প্রতিযোগী এবং একজন সংস্কারপন্থী প্রার্থীর মধ্যে। মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ, সাঈদ জালিলি, এবং মাসুদ পেজেশকিয়ান বর্তমানে নির্বাচনে নিজেদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে উভয় রক্ষণশীল প্রার্থী যদি প্রতিযোগিতায় থেকে যান তবে নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারে।

ইরানের শহরগুলিতে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ড রাস্তায় শোভা পাচ্ছে, টেলিভিশনের বড় পর্দায় রাষ্ট্রপতি বিতর্ক চলছে এবং প্রার্থীরা ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য ইরান জুড়ে চষে বেড়াচ্ছে। 

ইরানের সংস্কারপন্থী রাজনীতিকরাও একমাত্র সংস্কারবাদী প্রার্থী পেজেশকিয়ানকে সমর্থন করার জন্য ব্যাপক উৎসাহ ও আশা দেখিয়েছেন। রুহানি, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ খাতামি এবং মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সাথে, পেজেশকিয়ানের পিছনে তাদের সমর্থন দিয়েছেন। 

প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ভোটারদের ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি বাতিল এবং একই সময়ে দেশটির প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর নিরপেক্ষ করার চেষ্টার আশ^াস দিয়েছেন। এছাড়া ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের বিপরীতে রিয়ালের পতনের প্রভাব মোকাবেলার বিষয়টি ভোটাররা এগিয়ে রাখছেন। 

ইরানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদমর্যাদার অফিসের প্রধান প্রতিযোগী হলেন রক্ষণশীল পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ, অতি রক্ষণশীল প্রাক্তন পারমাণবিক আলোচক সাইদ জালিলি এবং একমাত্র সংস্কারবাদী মাসুদ পেজেশকিয়ান।

অন্যরা হলেন রক্ষণশীল তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি, ধর্মগুরু মোস্তফা পুরমোহাম্মাদি এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদ ফাউন্ডেশনের অতি রক্ষণশীল প্রধান আমির হোসেন গাজিজাদেহ-হাশেমি।

তবে বিশ্লেষকদের মতে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পাবেন। অর্থাৎ এ নির্বাচনের ফল খামেনির উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করবে। 

খামেনির পক্ষ থেকে জনসম্মুখে কোনো প্রার্থীকে সমর্থনের কথা জানানো না হলেও টেলিভিশনে এক বক্তৃতায় খামেনি বলেন, ‘যিনি মনে করেন আমেরিকার আনুকূল্য ছাড়া কিছুই করা যাবে না, তিনি দেশটা ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবেন না।’

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে খামেনির উপদেষ্টা ও দেশটির রেভল্যুশনারি গার্ডসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি ভোটারদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন যার দৃষ্টিভঙ্গি খামেনির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। তিনি বলেন, জনগণকে এমন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে, যিনি নিজেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ভাববেন। তিনি বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।  সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি 

news