তিউনিসিয়ায় কি একনায়কতন্ত্র ফিরে এসেছে?

তিউনিসিয়ায় সংবিধান পরিবর্তনের লক্ষ্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সায়িদ যে গণভোটের আয়োজন করেছেন তার প্রতিবাদে দেশটির হাজার হাজার নাগরিক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

তিউনিসিয়ায় গত কয়েক মাস আগেই রাজনৈতিক সংকট জোরদার হয়ে ওঠে যখন প্রেসিডেন্ট কাইস সায়িদ দেশটির সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ-স্পিকারকে পদচ্যুত করে সংবিধান সংশোধনের জন্য গণভোট আয়োজনের কথা জানান।


এ ছাড়াও তিনি সংসদ সদস্যদের দায়মুক্তির আইন বাতিল করেছেন ও সংবিধান নজরদারির কমিটিকেও বরখাস্ত করেছেন। সায়িদ কায়িস বিচার বিভাগে শুদ্ধি অভিযানের নামে ৫৭ জন বিচারপতিকেও কথিত আর্থিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের সহযোগী হওয়ার দায়ে পদচ্যুত করেছেন। অথচ তিউনিসিয়ার জনগণ এসব পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং এসব পদক্ষেপকে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে গণ-আন্দোলনের অর্জিত সাফল্যগুলো ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী বলে উল্লেখ করছে।

কিন্তু ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট সংবিধান পরিবর্তনের গণভোট অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে যাচ্ছেন। প্রস্তাবিত নতুন সংবিধানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নজিরবিহীন মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে এবং এ সংবিধান কার্যকর হলে প্রেসিডেন্টই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষমতা অর্জন করবেন। এ ছাড়াও নতুন সংবিধান অনুযায়ী ইসলাম ধর্ম তিউনিসিয়ার রাষ্ট্রধর্ম থাকবে না।  অন্য কথায় নতুন সংবিধান গৃহীত হলে প্রেসিডেন্টই হবেন দেশটির প্রায় সব ক্ষমতা বা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

প্রেসিডেন্ট কাইস সায়িদের বিরোধীরা বলছেন এই প্রেসিডেন্ট ২০১১ সালের গণ-বিপ্লবের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করেছেন যে বিপ্লবের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বেন আলী। তারা বলছেন, কাইস আবারও একনায়কতন্ত্র ফিরিয়ে আনছেন। তাই তারা গণভোট বর্জন করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন যাতে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সব অর্জন ব্যর্থ না হয়।  কাইসের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বৃহত্তম দল হিসেবে পরিচিত ইসলামপন্থী 'আননাহদা' পার্টি এই গণভোট বয়কটের হুমকি দিয়েছে। 'গণভোট বাতিলের জাতীয় ক্যাম্পেইন' নামক আন্দোলনও ২৫ জুলাইয়ে অনুষ্ঠেয় এই গণভোট বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে। ওদিকে দৃশ্যত কাইস সায়িদও গণভোট অনুষ্ঠানে দৃঢ়-সংকল্প।

তিউনিসিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ সংকটাপন্ন। পেশাজীবী ইউনিয়নগুলোর ধর্মঘটের ডাকে সাড়া দিয়ে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বেতন বাড়ানোর দাবিতে দেশটির সরকারি কর্মীরা ধর্মঘট করেছেন। বলা হচ্ছে তিউনিসিয়া ১৯৬৫ সনে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর আর কখনও এত গভীর অর্থনৈতিক সংকটের শিকার হয়নি। আর এসব অবস্থা কাইস সায়িদের স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপগুলোর ব্যর্থতাকেই তুলে ধরেছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও গভীর সংকটের শিকার হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।খবর পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news