বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সংকট ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক ভূমিকা

আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস উপলক্ষে এক বার্তায় ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদ ওয়াহিদি বলেছেন: "আজকের এ দিনটি যুদ্ধ, সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে যারা নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিজেদের জন্মভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত কিংবা গৃহহীন হয়ে অন্যদেশে আশ্রয় নিয়েছে সেইসব জনগোষ্ঠীর ইচ্ছা, চাহিদা এবং উদ্বেগ তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ।

বার্তার আরেকটি অংশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াহিদি পশ্চিম এশিয়া বিশেষ করে আফগানিস্তানে শরণার্থী সংকট ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধ্বংসাত্মক ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছেন।

ওয়াহিদি বলেন, কিছু দেশে মার্কিন দখলদারিত্ব এবং সামরিক উপস্থিতির কারণে এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা এবং বিপুল সংখ্যক লোকের বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। গত এক বছরে বিশ্ব জনমত আবারও আফগানিস্তানে কথিত নিরাপত্তা রক্ষকদের ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টার সাক্ষী হয়েছে যেখানে তাদের দুই দশকের উপস্থিতির কারণে আফগান জনসংখ্যার বিভিন্ন শ্রেণী বিশেষ করে তরুণ এবং বৃদ্ধদের মধ্যে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।  

আমেরিকায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বা ৯/১১' এ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথিত লড়াই এবং আল-কায়েদার সাথে সহযোগিতার অভিযোগে তালেবান সরকারকে উৎখাতের অজুহাতে জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ ও দখল করে নেয়। সে সময় দেশটিতে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সৈন্যের সংখ্যা ১৪ হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

যাইহোক গত  ২০ বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত  আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতির ফলে সেখানে কেবল নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র্য, মাদক উৎপাদন ও পাচার এবং সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটেছে। এরপর আফগানিস্তানে তালেবান গোষ্ঠীর আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়া এবং ট্রাম্প প্রশাসন দোহাতে একটি শান্তি চুক্তি সম্পন্ন করার সাথে সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটিতে দখলের অবসান ঘটাতে বাধ্য হন যেটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের চেয়েও খারাপ ছিল। মূলত আমেরিকা আফগানিস্তানে কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি। জো বাইডেন ২০১১ সালের আগস্টের মধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন যা ছিল আমেরিকার জন্য একটি লজ্জাজনক এবং কলঙ্কজনক পলায়ন। এখন তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার  পর এবং  অন্য কোন দেশ তাদেরকে স্বীকৃতি না দেয়ায় আফগান জনগণের অবস্থার দিনদিন অবনতি হচ্ছে। জাতিসংঘ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো আফগানিস্তানের বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্ব সমাজকে বারবার সতর্ক করেছে।

এদিকে আফগানিস্তানের অবনতিশীল অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি জন্য তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে এর জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে। কারণ সেসব দেশে অভিবাসীদের আগমন বৃদ্ধি, সীমান্তের নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি, মাদকের উৎপাদন ও পাচার বৃদ্ধি এবং সন্ত্রাসী হুমকি বৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

একই সময়ে গোলযোগপূর্ণ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা গ্রহণ এবং দেশটি দখল করার পর প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিশেষ করে ইরানে আফগান শরণার্থীদের নতুনভাবে ঢল নেমেছে। গত চার দশক ধরে ইরান এরইমধ্যে লাখ লাখ আফগান জনগণকে আশ্রয় দিয়ে তাদের জন্য মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে আসছে।

 এ প্রসঙ্গে ইরানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে: গত চার দশক ধরে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পবিত্র বরকতময় ব্যবস্থায় বিপুল সংখ্যক আফগান নাগরিক নিজ দেশে চলমান যু্দ্ধ ও সংঘাতের ভয়ে ইরানের সীমান্তে উপস্থিত রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান কোন স্লোগান ছাড়াই তার এজেন্ডায় শরণার্থীদের সুরক্ষার কৌশল নিয়েছে।

মানবাধিকার এবং আফগান জনগণকে সহায়তার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্লোগান সত্ত্বেও বাইডেন প্রশাসন তার ঠিক বিপরীত কাজ করেছে। এমনকি ওয়াশিংটন সন্ত্রাসবাদের শিকারদের আত্মীয়দের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অজুহাতে প্রায় ৭শো কোটি ডলার আফগান অর্থ বাজেয়াপ্ত করেছে। যদিও আফগানিস্তান ছাড়ার আগে এ দেশে আইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন করাসহ বিভিন্ন উপায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান জনগণের জন্য সাহায্যে বাধা সৃষ্টি করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই দেশটিতে সন্ত্রাসী বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।

ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান গত চার দশক ধরে আফগান জনগোষ্ঠীর এক বিশাল শরণার্থী সম্প্রদায়কে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এমনকি ইরানের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক দশকে নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটির সরকার লাখ লাখ আফগান শরণার্থীর জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এবং তারা কখনই এসব মানবিক পরিষেবা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় নি।।পার্সটুডে/এনবিএস/২০২২/একে

news