অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে বিব্রতকর এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। দেশটির একজন আদিবাসী সিনেটর রাজাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, তিনি তার রাজা নন। সফরের দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন রাজা চার্লস। তখনই এই ঘটনা ঘটে।
‘এই ভূমি আপনার না, আপনি আমার রাজা নন,’ রাজার সামনে গিয়ে চিত্কার করে বলেন আদিবাসী সিনেটর লিডিয়া থর্প। স্বতন্ত্র সিনেটর মিজ থর্প প্রায় মিনিটখানেক ধরে এভাবে চিকিত্কার করতে থাকেন। ওই সময় তিনি আরও অভিযোগও করেন, তাদের (অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা) মানুষরা গণহত্যারও শিকার হয়েছে।
পরে নিরাপত্তা কর্মীরা দ্রুত এগিয়ে এসে তাকে ধরে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে নিয়ে যায়। এমন ঘটনার পর দ্রুত অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর সফররত ব্রিটিশ রাজ দম্পতি পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অপেক্ষমাণ মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তবে আদিবাসী জ্যেষ্ঠ সদস্য ভায়োলেট শেরিডান বলেছেন, থর্পের আচরণ ছিল ‘অসম্মানজনক’ এবং ‘তার কথা আমার কথা নয়’। রাজা ও রানিকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়েছিলেন শেরিডান।
কমনওয়েলসভুক্ত দেশগুলোর একটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে এখন যার প্রধান রাজা তৃতীয় চার্লস। তবে এই পদে পরিবর্তন আনা হবে কিনা, সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, থর্প অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের একজন স্বতন্ত্র সিনেটর, যিনি দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সরকার ও আদিবাসীদের মধ্যে একটি চুক্তির পক্ষে কথা বলে আসছেন। অস্ট্রেলিয়াই একমাত্র সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ যেখানে অনেক আদিবাসী ও টরেস স্ট্রেইট দ্বীপবাসীরা তাদের সার্বভৌমত্ব বা জমি রাজার হাতে তুলে দেয়নি। ঘটনার পর থর্প বিবিসিকে বলেন, তিনি রাজার সামনে ঐভাবে চিত্কার করার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সার্বভৌম হতে হলে এই ভূমি থেকেই (অস্ট্রেলিয়া) আপনাকে আসতে হবে।’ তিনি মনে করেন যে, ভাষণ দেওয়ার সময় রাজা চার্লসের উচিত ছিল আদিবাসীদের সঙ্গে শান্তি চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করার জন্য অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টকে নির্দেশনা দেওয়া।
থর্প বলেন, আমরা উপনিবেশ স্থাপনকারী এমন মানুষের কাছে মাথা নত করতে পারি না, যার পূর্বপুরুষরা এখানে গণহত্যার সংঘটনের জন্য দায়ী। এর আগে ২০২২ সালে সিনেটর হিসাবে শপথ নেওয়ার সময় ব্রিটেনের প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে ‘ঔপনিবেশিক শাসক’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তিনি।
সফরের দ্বিতীয় দিনে পার্লামেন্টের অনুষ্ঠানে রাজা কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়লেও বাইরের পরিবেশ ছিল অন্যরকম। পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে শত শত মানুষ রাজাকে দেখার জন্য সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পতাকা নেড়ে রাজাকে স্বাগতম জানিয়েছেন তারা।