আর কয়েকদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অবশ্য এরই মধ্যে বেশ কিছু রাজ্যে আগাম ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। এরপরও ভোটারদের মন জয়ে শেষ মুহূর্তের প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রতিবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে এবারও নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। এক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসছে পুরুষ বনাম নারী তথা লিঙ্গেভেদের বিষয়টিও।

এবারের নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের মধ্যে পছন্দের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিপরীতে নারী ভোটাররা জরিপকারীদের বলছেন, তারা ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী ও বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পছন্দ করেন।

 মার্কিন জনগণের মধ্যে এই যে লিঙ্গগত ব্যবধান তা মূলত গত এক দশকের সামাজিক টানাপোড়েনের প্রতিফলন যা এবারের নির্বাচনে ভোটারদের রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।
 
এবার একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছেন। কমলা হ্যারিস হলেন সেই নারী যিনি ইতিমধ্যে নির্বাচনে বেশ প্রভাব সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া তিনি নিজ পরিচয় নিয়ে বেশি কথা না বলার জন্য এগিয়েও রয়েছেন।
 
গত মাসে সিএনএন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লিঙ্গ তথা নারী-পুরুষ বিষয় নিয়ে কমলা হ্যারিস খোলাখুলিভাবেই বলেন, ‘শুনুন, আমি এবারের নির্বাচনে লড়ছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে, জাতি-বর্ণ ও লিঙ্গ নির্বিশেষে কাজটা করার জন্য এই মুহূর্তে আমিই সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।’
  
যদিও কমালা এই বিষয়টিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছেন, তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণার নির্ধারক বিষয় হয়ে উঠছে লিঙ্গ। এবারের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ম্যাডাম প্রেসিডেন্ট’ একটা নতুন ব্যাপার হতে পারে এবং এমনটা অনুমান করাই যায় যখন অনেক ভোটারই বিষয়টি পছন্দ করেন। যদিও কেউ কেউ এটাকে কিছুটাই বিরক্তির চোখেই দেখছেন।
 
কমলা হ্যারিস প্রচারাভিযানে এ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। কিন্তু কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, নির্বাচনের মাঠে লিঙ্গভেদের বিষয়টি ‘লুকায়িত’ রয়েছে এবং এর ফলে কিছু মানুষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন নারীর পক্ষে ভোট নাও দিতে পারেন।
 
এখন ২০২৪ সাল এবং এই সময়েও কিছু লোক হয়ত সরাসরিই বলবেন যে, তিনি কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট বানাতে ভোট দেবেন না। একজন গণতান্ত্রিক কৌশলপ্রণেতা বলছেন, ভোটাররা যখন জরিপকারীদের এমনটা বলবেন যে, কমলা হ্যারিস এখনও ‘প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রস্তুত’ নন বা তার ‘ব্যক্তিত্ব’ ঠিক নেই। তার মানে তারা আসলে শেষ পর্যন্ত এটা বুঝাতে চান যে, প্রার্থী একজন নারী (আর এ কারণেই তাদের পছন্দ নয়)।
 
 অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রচারণায়ও বলা হচ্ছে, ভোটের সঙ্গে লিঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে গত সপ্তাহেই এক জায়গায় বলা হয়েছিল, ‘কমলা দুর্বল, অসৎ ও বিপজ্জনক উদারপন্থি’। যার ফলে ৫ নভেম্বর আমেরিকার জনগণ তাকে প্রত্যাখ্যান করবে। ট্রাম্প শিবিরের একজন সিনিয়র উপদেষ্টা ব্রায়ান ল্যাঞ্জা বলেছেন, এবার ট্রাম্পের জয়ের বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী। কেননা তিনি একজন পুরুষ।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনী দৌড়ে পুরুষদের অগ্রসৈনিক হতে চান। অন্যদিকে কমলা হ্যারিস এ কথা কমই স্বীকার করেন যে, তিনি একজন নারী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের একটি জরিপ মতে, শুধু পুরুষ হওয়ার কারণে ১৪ শতাংশ পুরুষ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। বিপরীতে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে কমলাকে সমর্থন করেন ১২ শতাংশ নারী।

news