পানামার কাছ থেকে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার এবার ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল রোববার পেপালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত করার সময় গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এই প্রথমবার নয় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন। এর আগেও, তিনি একবার এই ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। ট্রাম্প তাঁর প্রথম প্রশাসনের সময় বলেছিলেন যে, তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। পরে তাঁর মন্তব্যের জেরে ড্যানিশ কর্মকর্তারা বলেন, তাদের রাষ্ট্রের অংশ এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বিক্রির জন্য নয়। পাল্টা হিসেবে তখন ট্রাম্প ডেনমার্কে তাঁর রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেন।

ট্রাম্প এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যার মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি পানামা খালকে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে আনার হুমকি দিয়েছেন। তিনি পানামা খাল দিয়ে মার্কিন জাহাজ চলাচলের ফি কমানোর দাবি করেন, অন্যথায় এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।

কেন হাওয়ারিকে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত মনোনীত করার বিষয়ে ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা এবং বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার স্বার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ একটি অপরিহার্য প্রয়োজনীয়তা।’ তিনি আরও লিখেন, ‘কেন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ প্রতিনিধিত্ব করতে একটি চমৎকার কাজ করবেন।’

উল্লেখ্য, ১৮৬৭ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছে বা বিষয়টি বিবেচনা করেছে। গ্রিনল্যান্ড উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অংশ, তবে এর ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং এটি ডেনমার্কের মাধ্যমে ইইউ ব্লকের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ওভারসিজ টেরিটরি হিসেবে ইউরোপীয় তহবিল পেয়ে থাকে।

গ্রিনল্যান্ড মূলত আর্কটিকের অংশ। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং সম্পদের জন্য বিভিন্ন জাতির মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রিনল্যান্ডের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন পর্যন্ত অঞ্চল দাবি করার চেষ্টা করেছে। গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে সোনা, রুপা, তামা এবং ইউরেনিয়াম এবং এই অঞ্চলের পানিতে তেলের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে, পানামার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রসঙ্গে ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনী এবং বাণিজ্যিক জাহাজ বহরের সঙ্গে অত্যন্ত অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। পানামা যা ফি নিচ্ছে তা হাস্যকর। আমাদের দেশের সঙ্গে এই জালিয়াতি অবিলম্বে বন্ধ হয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণে পানামা খাল নির্মিত হয় এবং এর আশপাশের এলাকায় কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের অধীনে ছিল। তবে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং পানামার মধ্যে একটি যৌথ চুক্তির পর পানামাকে পুরোপুরিভাবেই খালটির নিয়ন্ত্রণ প্রদান করা হয়।

ট্রাম্প তাঁর পোস্টে পানামা খাল এবং এর আশপাশে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি (খালটি) কেবল পানামার ব্যবস্থাপনার জন্যই ছিল, চীন বা অন্য কারও জন্য নয়। আমরা এবং আমরা কখনোই এটি ভুল হাতে পড়তে দেব না!’

news