জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন সামনে এনে দিচ্ছে একটি উদ্বেগজনক বাস্তবতা – গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা কারণে বিশ্বজুড়ে নারীর অধিকার ক্ষীণ হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নানা সংঘাত, মানবিক সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের ছায়ায় গত বছর বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দেশে নারীর অধিকার হ্রাস পেয়েছে।
জাতিসংঘের নারীবিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা ও নীতির ব্যর্থতার ফলে নারীর সমানাধিকারকে এগিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে, নারী বিদ্বেষকে মূলধারায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে নীতিনির্ধারকদের প্রচলিত ধারাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নারী অধিকারের ব্যাপারে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী পার্লামেন্টে নারীর প্রতিনিধিত্ব যদিও আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে, তবুও পুরুষ আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা প্রায় তিন-চতুর্থাংশে পৌঁছেছে। ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে, তবে এখনো প্রায় ২০০ কোটি নারী ও মেয়ে শিশু আক্রমণের শিকার। আইনি অধিকার সম্পর্কে দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ দেশ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন করেছে, কিন্তু নারীরা এখনও পুরুষদের তুলনায় মাত্র ৬৪ শতাংশ ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষা পেয়েছেন।
সংঘাত-সংশ্লিষ্ট যৌন সহিংসতার ঘটনা গত ২০২২ সাল থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ৯৫ শতাংশ ভুক্তভোগী নারী ও মেয়ে শিশু। পারিবারিক সহিংসতার হারও উদ্বেগজনক মাত্রায় রয়েছে, যেখানে প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বা অন্য কারো দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য থেকে নারীরা আড়াইগুণ বেশি বেতনহীন সেবার কাজ করছেন।
প্রতিবেদনে ছয় দফার কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে যা ডিজিটাল বিপ্লব, দারিদ্র্য বিমোচন, শূন্য সহিংসতা নীতি, সম্পূর্ণ ও সমান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এবং জলবায়ু ন্যায়বিচারের আহ্বানে কেন্দ্রভূত। ইউএন উইমেন নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস আশাবাদী, যদি এই রোডম্যাপ কার্যকর করা যায়, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের নির্ধারিত লিঙ্গ সমতার লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হবে।


