ইয়েমেনের রাস ইসা তেল বন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত ও ১০২ জন আহত হয়েছেন। হুথি-সমর্থিত আল-মাসিরা টিভি জানিয়েছে, গতকাল এই হামলাটি ইয়েমেনে মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলাগুলোর একটি। হোদেইদাহ স্বাস্থ্য দপ্তরের বরাত দিয়ে তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) দাবি করেছে, হুথিদের জ্বালানি ও অর্থের উৎস কেটে দিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
সেন্টকমের একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলা হয়েছে, "আজ মার্কিন বাহিনী ইরান-সমর্থিত হুথিদের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিয়েছে। এই হামলার লক্ষ্য ছিল হুথিদের অর্থনৈতিক শক্তির উৎস ধ্বংস করা।" তবে, রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে পেন্টাগন নিহতের সংখ্যা বাড়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক মোহাম্মদ আল-আত্তাব জানান, মার্কিন বিমান হামলা কয়েকটি এলাকায় হয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে বন্দর সুবিধাগুলোতে। "প্রথম চারটি বিমান হামলা হয়েছিল যখন কর্মীরা কাজ করছিলেন," তিনি বলেন। হামলা এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে সেখানে থাকা ট্রাক চালক ও কর্মীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এলাকা।
এই হামলার বিরুদ্ধে ইয়েমেনজুড়ে তীব্র নিন্দা উঠেছে, বিশেষত বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু এবং রাস ইসা বন্দরের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে। ইয়েমেনের ৭০% আমদানি এবং ৮০% মানবিক সহায়তা এই রাস ইসা, হোদেইদাহ ও আস-সালিফ বন্দর দিয়ে হয়। আল-মাসিরা টিভি শুক্রবার ভোরে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করেছে, তাতে রাতের আকাশে বিশাল বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা যায়। পরে ধ্বংসস্তূপ, আগুনের লেলিহান শিখা এবং নিহত বেসামরিক নাগরিকের মর্মান্তিক ছবি দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে আরবিতে লেখা ছিল, "রাস ইসা তেল বন্দরে মার্কিন আগ্রাসনের ভয়াবহতা: বহু শহীদ ও আহত কর্মী।"
এছাড়াও, আল-মাসিরা টিভির শেয়ার করা আরও কিছু ভিডিওতে ধ্বংসযজ্ঞ ও গুরুতর পোড়া বন্দর কর্মীদের সাক্ষাৎকার দেখা গেছে। গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই হামলাটি মার্কিন বাহিনীর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি। মার্চ মাসে দুই দিনের মার্কিন হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন বলে হুথি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এর আগে বলেছে, রাস ইসায় অবস্থিত তেল পাইপলাইন ও বন্দর ইয়েমেনের "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিবর্তনীয় অবকাঠামো"। আল-মাসিরার এক প্রতিবেদক জানান, হামলার পর স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স ও ইয়েমেনি রেড ক্রিসেন্টের সদস্যদের ঘটনাস্থলে প্রেরণ করা হয়েছে, যারা আহতদের চিকিৎসা ও আগুন নেভানোর কাজ করছেন।
হুথি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাসের আল-আতিফি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, "মার্কিন শত্রুর এই অপরাধ ইয়েমেনি জনতাকে গাজা সমর্থন থেকে বিরত করবে না, বরং তাদের সংকল্প আরও দৃঢ় করবে।" হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র তারা ধ্বংস করেছে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা ইসরায়েল-সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর ১০০টিরও বেশি হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা দাবি করে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের জবাবেই এই অভিযান চলছে। ওয়াশিংটন হুথিদের সতর্ক করে বলেছে, লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের উপর আক্রমণ চলতে থাকবে।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কতদিন আর এই রক্তপাত চলবে? সাধারণ মানুষের জীবন কি কেবলই রাজনীতির বলি হবে? ইয়েমেনের মানুষ ইতিমধ্যেই যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এই হামলা তাদের দুর্ভোগ আরও বাড়াল। খবর আলজাজিরার
#ইয়েমেন_হামলা #মার্কিন_আগ্রাসন #হুথি #রাস_ইসা_বন্দর #গাজা_সমর্থন


