পশ্চিম এশিয়ায় বাইডেন ও তেহরানে পুতিনের সফর! বৃদ্ধ বাঘ ও বাড়ন্ত সিংহের প্রতিযোগিতা!

পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সফরের পর ইরান সফরে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

একই অঞ্চলে এ দুই সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ হলেও লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে তাদের সফরের ভিন্নতা এবং ব্যর্থতা ও সম্ভাব্য সাফল্যের পাল্লার প্রভেদও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

বাইডেন এসেছিলেন ইহুদিবাদী ইসরাইল তথা অধিকৃত ফিলিস্তিনে ও সৌদি আরবে। লক্ষ্যটা ছিল সৌদি আরবের সঙ্গে কিছুটা শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ককে আবারও উষ্ণ করা, জ্বালানী তেলের উৎপাদন বাড়াতে রিয়াদকে রাজি করানো ও রিয়াদ-তেলআবিব সম্পর্ককে আরও গভীর করার এবং সর্বোপরি ইরান-বিরোধী নিরাপত্তা জোট গঠনের প্রচারণা জোরদারের মতলব নিয়ে। এসবের মধ্যে রিয়াদ-তেলআবিব সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা ছাড়া বাইডেনের আর কোনো লক্ষ্য তেমন একটা হালে পানি পায়নি। 

পশ্চিম এশিয়ায় বাইডেনের মোটামুটি এই ব্যর্থ সফরের প্রেক্ষাপটে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইরান সফরে আসছেন আগামীকাল। কোনো দেশ সম্পর্কে মিথ্যা ভীতি ছড়িয়ে জোট গঠন বা চাঁদা আদায় তার উদ্দেশ্য নয়, বরং সিরিয়া সংক্রান্ত আস্তানা শান্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং তুরস্ক ও ইসলামী ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করাই তার এ সফরের মূল লক্ষ্য। তেহরান ও মস্কো উভয়ই মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার শিকার বলে একই ব্যথায় ব্যথিত হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ককে দিনকে দিন আরও শক্তিশালী করতে বাধ্য হচ্ছে।

সৌদি তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে তেলের দাম কমিয়ে আনার মাধ্যমে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানোর মার্কিন প্রচেষ্টা থেকে বোঝা যায় মার্কিন সরকার নিজেই এ নিয়ে সংকটে রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের যুদ্ধ পুতিনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি এবং রাশিয়াকে কোণঠাসা করার মার্কিন ও পশ্চিমা প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। বরং পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অব্যাহত রেখেছেন। 

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার পুতিন বিদেশ সফর করছেন। এক মাসেরও কম সময়ে পুতিন কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশকাবাদে ও সেখান থেকে তাজিকিস্তানেও সফর করেন। এরপর তেহরান সফরের পালা। আর এসব সফর থেকে বোঝা যাচ্ছে পুতিন তো একঘরে হননি বরং তিনি প্রাচ্যে তার অবস্থান শক্তিশালী করার পর এখন পশ্চিম এশিয়াতেও পাশ্চাত্যের মোকাবেলায় অবস্থান শক্তিশালী করার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন এবং এখানে তিনি বিন্দুমাত্রও পিছিয়ে থাকতে রাজি নন। 

বাইডেন বলেছিলেন তিনি পশ্চিম এশিয়ায় চীন ও রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে এ অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি বজায় রাখবেন। 

অন্যদিকে তেহরানে তুর্কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের সম্ভাব্য বৈঠকও বেশ গুরুত্ববহ এবং এতে তুর্কি-রুশ সম্পর্কের সাম্প্রতিক শীতলতাও হয়ত কমে আসবে। 

বাইডেন ইরান বিরোধী সামরিক জোট গঠনের যে ডাক দিয়েছেন তাতে সাড়া দেয়নি কেউ, বরং সৌদি আরব, আমিরাত, মিশর, ইরাক ও জর্দান সরাসরি এর বিরোধিতা করে বলেছে, তারা ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় কোনো কোনো মার্কিন বিশ্লেষক বলেছেন, পশ্চিম এশিয়ায় বাইডেনের সাম্প্রতিক সফর ছিল ভুল পদক্ষেপ এবং তা ব্যর্থ হয়েছে।

অন্যদিকে পুতিনের সফরের মধ্যে নেই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ও অশান্তি সৃষ্টির প্রয়াস বা দ্বিমুখী নীতির চর্চা। ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারই তার এই সফরের মূল লক্ষ্য। 

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেছেন, পাশ্চাত্য ও আমেরিকা বিশ্বের ওপর কর্তৃত্ব হারিয়েছে।খবর পার্সটুডে/এনবিএস২০২২/একে

news