নিরাপত্তার গ্যারান্টি পেলে ইয়েমেন ত্যাগ করতে প্রস্তুত: বিন সালমান
ইয়েমেন যুদ্ধ বিষয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশ্লেষক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথমটি হলো আনসারুল্লাহ চেষ্টা চালাচ্ছে 'না যুদ্ধ না শান্তি'-এরকম অনিশ্চিত পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে। বিগত প্রায় তিন মাস ধরে এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ইয়েমেনে। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর মেয়াদ আর বাড়ানো হয় নি।
এই পরিস্থিতি আগ্রাসী শক্তি সৌদিআরব, আরব আমিরাত কিংবা ইসরাইলসহ পশ্চিমাদের স্বার্থ যতোটা সংরক্ষণ করছে, কোনোভাবেই ইয়েমেনের ন্যাশনাল স্যালভেশন সরকার কিংবা সেদেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করছে না। এ কারণে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আনসারুল্লাহর নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি সরকারের নীতি ঘোষণার সময় 'না যুদ্ধ না শান্তি' পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে সেদেশের জনগণ বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিক্ষাভকারীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্লোগান ছিল 'অবরোধ সেই যুদ্ধই'।
পরিসংখ্যান বলছে ইয়েমেনে বিগত আট বছরের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে সামরিক সংঘাতে যে পরিমাণ জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, অবরোধের কারণে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইয়েমেন যুদ্ধে ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই ৫ বছরের কম বয়সী শিশু। নিহতদের সংখ্যার শতকরা ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ মারা গেছে খাদ্য, পানীয় ও চিকিৎসার অভাবে। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির অনুমান হলো ইয়েমেন যুদ্ধ চলতে থাকলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নিহতের এই সংখ্যা বেড়ে ১৩ লাখে দাঁড়াবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি হলো, সৌদি আরব বিশেষ করে স্বয়ং বিন সালমানের ঘোষণা। বিন সালমান বলেছে আনসারুল্লাহর কাছ থেকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি পাবার শর্তে তারা ইয়েমেন ত্যাগ করতে প্রস্তুত।
আনসারুল্লাহর নেতৃত্বাধীন ইয়েমেনের ন্যাশনাল সালভেশন সরকার 'না যুদ্ধ না শান্তি' পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে জরুরি আল্টিমেটাম দেওয়ার পর বিন সালমান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে ইয়েমনও ৪টি শর্ত দিয়েছে। শর্তগুলো হলো: অবরোধ তুলে নেওয়া, ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং ইয়েমেন ত্যাগ করা। বল এখন সৌদিআরবের কোটে। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিন-সালমান যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াকে নিজেদের জন্য ক্ষতিকর বলেই ভাবছে। সেই ক্ষতি থেকে বাঁচার পথই তিনি বেছে নিতে পারেন।
কিন্তু যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়ায় তা হলো ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে সৌদিআরব এবং আরব আমিরাতকে যেই আমেরিকা এবং ইসরাইল ইন্ধন জুগিয়েছে, তারা কি সৌদিআরবকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে দেবে? সময়ই সেই প্রশ্নের জবাব দেবে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
খবর পার্সটুডে/ এনবিএস/ ২০২৩/ একে