ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে ইসরাইল
ইহুদিবাদী ইসরাইল পরমাণু সমঝোতা ধ্বংস করে দেয়ার জন্য আমেরিকা ও পাশ্চাত্যের অন্য দেশগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব খাটানো, সৌদি আরবের সাথে ইরানের সম্পর্ক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করা এবং ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে ইসরাইল এ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করারও চেষ্টা করছে।
বাগদাদে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে পঞ্চম দফা আলোচনা সফল হওয়ার পর সৌদি আরব সংলাপের অগ্রগতির বিষয়ে খবর গোপন রাখার চেষ্টা করেছে। এ ধারণা করা হচ্ছে সৌদি আরব ইসরাইলের ভয়ে তটস্থ এবং ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় অগ্রগতির বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে চায় না। ইসরাইলের দৈনিক জেরুজালেম পোস্ট স্বীকার করেছে ইসরাইল এ জন্য চিন্তিত যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার সফল আলোচনা ইসরাইলের সঙ্গে সৌদি আরবের যেসব সমঝোতা হয়েছে তা ধ্বংস কিংবা হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলের শেষের দিকে ইসরাইল আরব দেশগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনে নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেয় এবং এ ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাবকে কাজে লাগায়। বিশেষ করে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে যাতে এর মাধ্যমে ছোট ছোট অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। এ ভাবে যাতে ইরানের নেতৃত্বে এ অঞ্চলে ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ শক্তিগুলোর উত্থান ঠেকানো যায়। এ কারণে ইসরাইল কোনোভাবেই চায় না আরব দেশগুলো বিশেষ করে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক আছে এমন আরব দেশের সাথে ইরানের সুসম্পর্ক গড়ে উঠুক।
অবশ্য কাহিনী এখানেই শেষ নয়। ইসরাইল মিথ্যা খবর প্রচারের মাধ্যমে তুরস্কসহ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। পরমাণু সমঝোতাও যাতে সাফল্যের মুখ না দেখে সেজন্য তারা গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য ইসরাইল এমন কৌশল খাটাচ্ছে যা গত কয়েক বছর আগে ইরানের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য কাজে লাগিয়েছিল।
ইরানের নিউজ চ্যানেল জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না করে ইউরোপীয় একটি কূটনৈতিক সূত্র দাবি করেছে, ইরানের কুদস বাহিনী তুরস্ক, ফ্রান্স ও জার্মানে সন্ত্রাসী অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওই তিন দেশকে টার্গেট করে এ ধরণের দাবি করা হয়েছে কেননা ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু আলোচনার অংশীদার এবং তুরস্কও পরমাণু সমঝোতাকে সমর্থন করে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইউক্রেন সংকট সৃষ্টির পর ইউরোপ বিকল্প জ্বালানির উৎস খোজার জন্য পরমাণু সমঝোতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চায়। অন্যদিকে আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুরস্কও ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া তুরস্ক সিরিয়া ইস্যুতেও এ অঞ্চলে ইরানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কিন্তু তারপরও তুরস্ক ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধী। কেননা এতে আঙ্কারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ফ্রান্স ও জার্মানির মতো তুরস্ক সরকারও ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার কথা বলছে। এ অবস্থায় ফ্রান্স, জার্মানি ও তুরস্কের সাথে ইরানের সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য ইরানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।খবর পার্সটুডের/এনবিএস/২০২২/একে