অস্ট্রেলিয়ার কাছে পারমানবিক সাবমেরিন বিক্রির যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ চীন
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উচ্চাভিলাষ মোকাবিলা করতে অস্ট্রেলিয়াকে পারমানবিক সাবমেরিন দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ মাস আগে স্বাক্ষরিত আউকাস চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এবার তারা এ পরিকল্পনার বিস্তারিত দিক প্রকাশ করলো। দেশ তিনটির এ ঘোষণা চীন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের উচ্চাভিলাষ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে ৩ দেশের এ ঘোষণা এলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পয়েন্ট লোমা নৌ ঘাঁটিতে গত সোমবার এক বৈঠকে মিলিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেস। তারা জানান ‘এইউকেইউএস’ চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তিনটি পারমাণবিক সাবমেরিন কিনবে। তাদের দাবি, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘মুক্ত ও স্বাধীন’ অবস্থা অক্ষুন্ন রাখতে এ চুক্তি করা হয়। মূলত বাইডেন ও তার মিত্ররা এ অঞ্চলে চীনের আধিপত্য ঠেকাতেই এ চুক্তি করা হয়। প্রথমে তিনটি সাবমেরিন কেনার পর ২০৩০ সালে অস্ট্রেলিয়া চাইলে আরও দু’টি সাবমেরিন কেনার চুক্তি করতে পারবে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন তারা।
এ চুক্তিতে আরও রয়েছে, এ তিন দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা, হাইপারসনিক অস্ত্র ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির শক্তি বৃদ্ধিতে একে-অপরকে সহায়তা করবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘এটি ইতিহাসের এক নতুন মোড়, যেখানে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং স্থিতিশীলতার বার্তা দেয়া হয়েছে যা প্রভাব প্রত্যাশিত শান্তি স্থাপন প্রচেষ্টায় কয়েক দশক ধরে বজায় থাকবে। আমি আপনাদের জাহাজের সাথী হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’অপরদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিস বলেনে, ‘গত ৬৫ বছরে প্রথম এবং ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক তথ্য শেয়ার করেছে।
আমরা এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ হামলা, চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তা এবং ইরান ও উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীল মানসিকতার’ কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এই নতুন চ্যালেঞ্জের মুহূর্তে আগের চেয়ে বর্তমানে তাদের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে এ চুক্তির বিরোধীতা করেছে চীন। বেইজিং অভিযোগ করেছে এ তিন দেশ স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা নিয়ে চলছে। যা এ অঞ্চলে দ্বন্দ্ব তৈরির ঝুঁকি আরও বাড়াবে। বেইজিংভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দি মোক আল জাজিরাকে বলেছেন, এটি ‘অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির’ সিদ্ধান্ত। এটি আরও প্রমাণ করছে ‘চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র চিন্তিত ও ভীত।
সোমবার সাবমেরিন বিক্রির যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এটি আসলে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। এটিতে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান নিতে পারবে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায়, অস্ট্রেলিয়ার সামরিক এবং বেসামরিকরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটিতে যোগ দেবেন। এছাড়া সামনের বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের পারমাণবিক সাবমেরিনগুলো অস্ট্রেলিয়ার বন্দরগুলো আগের তুলনায় বেশি নিয়ে যাবে। এরমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকে অত্যাধুনিক এ সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণ ও চালানো শেখানো এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করা হবে।
এরপর ২০৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভার্জিনিয়া ক্লাসের তিনটি সাবমেরিন বিক্রি করা হবে। যেগুলোর প্রতিটির দাম পড়বে ৩০০ কোটি ডলার। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রযুক্তি দিয়ে সাবমেরিন তৈরি শুরু করবে। যুক্তরাজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সাবমেরিন তৈরি সম্পন্ন করবে। সব কিছু সম্পন্ন হলে ২০৪০ সালের শুরুর দিকে এগুলো অস্ট্রেলিয়ার নৌ বাহিনীর কাছে দেওয়া হবে।
সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেইজিংয়ে এক ভাষণে চীনের সেনাবাহিনীকে ‘ইস্পাত প্রাচীর হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। শি’র সঙ্গে শিগগিরই কথা বলতে চান কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাইডেন বলেন, ‘হ্যা’। তবে কখন তিনি তার সঙ্গে কথা বলবেন তা বলতে পারবেন কি, এমন অপর প্রশ্নের জববে তিনি বলেন,‘ না’।
এনবিএস/ওডে/সি