বাবা-মা থেকে আলাদা করলে বিবাহবিচ্ছেদ অন্যায় নয়: ভারতের আদালত
কোনও উপযুক্ত কারণ ছাড়াই স্বামীকে তার বাবা-মার থেকে আলাদা করলে, তাকে 'কাপুরুষ' ও 'বেকার' বললে, তা মানসিক অত্যাচারেরই সামিল। এর জন্য স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ দিলে তা অন্যায় নয় বলে জানিয়েছে ভারতের কলকাতা হাইকোর্ট।
বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি উদয় কুমারের বেঞ্চ এক মামলার প্রেক্ষিতে বলে, ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী বিয়ের পর ছেলেরা বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। স্ত্রী যদি স্বামীকে তার বাবা-মার থেকে আলাদা হতে বলেন তবে তার উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে। স্ত্রীর অনুরোধে বাবা-মার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া আমাদের দেশে কোনও সাধারণ অভ্যাস নয়।
ওই মামলার প্রেক্ষিতে বেঞ্চ বলে, ঘরোয়া ঝামেলা এবং আর্থিক সমস্যাকে কেন্দ্রে করে দাম্পত্য কলহ ছাড়া এ ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছেদ করতে বলার কোনও যৌক্তিক কারণ ছিল না। কিন্তু আবেদন বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের জন্য স্বামী বাবা-মা বাড়ি ছেড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন।
সুতরাং, আবেদনকারীর স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থেকে দূরে আলাদা থাকা আকাঙ্খা ন্যায়সঙ্গত কারণের উপর ভিত্তি করে নয়। একে নিষ্ঠুরতার সমান বলে মন্তব্য করেন আদালত।
আদালতের বেঞ্চ আরও বলে, সাধারণত কোনও ছেলে তার বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে চায়। স্বামীকে তার পরিবারের কাছ থেকে আলাদা হতে বাধ্য করার জন্য স্ত্রীর লাগাতার প্রচেষ্টা অত্যাচারের সামিল।
২০০১ সালের ২ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি পারিবারিক আদালত ওই দম্পতির বিয়ে ভেঙে দেয়। স্বামীর উপর স্ত্রীর মানসিক অত্যাচারের অভিযোগে এই বিচ্ছেদ রায় দেয় আদালত। তাকে চ্যালঞ্জে করে ২০০৯ সালের ২৫ মে হাইকোর্টে আবেদন জানায় স্ত্রী। স্বামীর অভিযোগ ছিল স্ত্রী তাকে 'কাপুরুষ' ও বেকার' বলে অভিহিত করে। তাকে বাবা-মার থেকে আলাদা হওয়ার জন্য ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া করতে থাকে।
শুনানিতে বেঞ্চ উল্লেখ করে, মামলাকারী তার ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখেছে, যাকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি সে একটা কাপুরুষ। তাকে আমি ঘৃণা করি। তার মতো বেকার লোকের সঙ্গে বিয়েতে আমার কোনও সম্মতি ছিল না। বিয়ে বন্ধ করারও চেষ্টা করেছিল সে। অন্য কোথাও বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্ত বাবা-মা জোর করে মামলাকারীকে বিয়ে দেয়। আদালত বলে, এতেই স্পষ্ট তিনি এই বিয়েতে খুশি ছিলেন না। মামলাকারী দাবি করেন, তিনি অন্যত্র বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
আদালত আরও উল্লেখ করে, স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। যার ফলে স্বামীর সরকারি চাকরি চলে যায়।
আদালত বলে, দীর্ঘ বিচ্ছেদ, মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার এবং একত্রে বসবাসের অনিচ্ছা তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক মেরামতের কোনও সুযোগই রাখেনি। আইন মেনে বিয়ে হলেও এ বিয়ে কাল্পনিক হয়ে উঠেছে। স্ত্রী আবেদন খারিজ করে দিয়ে দম্পতির বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এনবিএস/ওডে/সি


