কিউবায় পণ্য সংকটে ব্যাপক বিক্ষোভ, পুলিশ মারমুখী

কিউবার কাইমানেরা শহরে তেল সহ নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এ শহরটি কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের কাছে। বিচ্ছিন্ন এ শহরে গত শনিবার কয়েক ডজন মানুষ উন্নত জীবনযাত্রা এবং স্বাধীনতার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। তারা দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সমালোচনা করে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে দাঙ্গা পুলিশ আসার আগে এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে জোরপূর্বক গ্রেপ্তার করার আগে, সরকারি ভবনগুলোর সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। হাভানায় মার্কিন দূতাবাস এই ক্রাকডাউনের নিন্দা করেছে। রোববার টুইটে মার্কিন দূতাবাস জানায়, নিরাপত্তা বাহিনী ‘কাইমানেরা শহরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংস ও মারমুখী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মানবাধিকারের দাবিতে বিক্ষোভরত নাগরিকদের তারা মারধর করেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ভয়ে কিউবা তার ইন্টারনেটও বন্ধ করে দিয়েছে।

নেটব্লকস নামে একটি সংস্থা যেটি ইন্টারনেট কার্যক্রম ট্র্যাক করে, সংস্থাটি বলেছে যে বিক্ষোভের খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কিউবা সরকার পুরো দ্বীপ জুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। কিউবায় সরকারপন্থী ব্লগাররা প্রতিবাদকারীদের ভিডিও আপলোড করার জন্য ইন্টারনেট বিঘ্নের জন্য দায়ী করেছেন। এর আগেও কিউবায় বিক্ষোভের সময়, কখনও কখনও কয়েক দিনের জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করার ইতিহাস রয়েছে।

গত রোববার ইন্টারনেট সংযোগ অনেকাংশে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলেও কিউবার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া কিউবেডেট বলেছে যে আর কোন প্রতিবাদ হয়নি। কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা কিউবার কর্মকর্তারা জানাননি। কিন্তু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলো জানিয়েছে, অন্তত পাঁচজনকে পুলিশ আটক করেছে।

কিউবাডেবেট রোববার দাবি করেছিল যে, ‘অস্বাভাবিক বিক্ষোভের’ পেছনে মাতাল লোকদের একটি ছোট দল জড়িত যা একটি ঘটনার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল। একই সঙ্গে এধরনের বিক্ষোভকে কিউবার কমিউনিস্ট-চালিত সরকারের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের বিদ্রোহের সূচনা হিসাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিবিপ্লবী মিডিয়া’।

কাইমানেরা ‘সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম পরিখা’ হিসাবে কিউবায় পরিচিত, কারণ শহরটি মার্কিন নৌ ঘাঁটি থেকে গুয়ানতানামো বে জুড়ে অবস্থিত। এ  কারাগারটি কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত। সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের নির্যাতন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য বিচারের অপেক্ষায় অনেক বন্দী এ কারাগারে আটক রাখা হয়।

মার্কিন ঘাঁটির নিকটবর্তী হওয়ায় বিদেশী এমনকি কিউবানদেরও এই শহরে যাওয়ার জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। প্রায় পাঁচ বছর আগে যখন সিএনএন’এর সাংবাদিকরা কাইমানেরা শহরে যেতে সক্ষম হয় তখন তারা সেখানকার বাসিন্দাদের দুধ এবং মাংস সহ অতিরিক্ত রেশন প্রদানের কথা জানতে পারে যা অনেক কিউবানদের কাছে বিলাসিতা হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল।

গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে, কিউবা বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ জ্বালানির ঘাটতিতে ভুগছে, গ্যাস স্টেশনগুলিতেও কয়েকদিন ধরে জ্বালানি নেই তারপরও দীর্ঘ কিউ পড়ে। এছাড়া খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতিও বাড়ছে। কিউবার কমিউনিস্ট-চালিত সরকার এ সংকটের জন্য মার্কিন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে, তবে কিউবার রাষ্ট্র-চালিত মিডিয়া স্বীকার করেছে যে বিভিন্ন দেশ ঐতিহ্যগতভাবে দ্বীপটিকে প্রতিশ্রুত জ্বালানি পাঠাচ্ছে না।

এনবিএস/ওডে/সি

news