যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাঁদে মানুষ পাঠাবে চীন, ফিরে আসছে ঠান্ডা যুদ্ধের ‘স্পেস রেস’
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়টা ঘিরে ছিল আরেক যুদ্ধ। সেটা হলো মহাকাশ-যুদ্ধ। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠিয়ে, তারপর কৃত্রিম উপগ্রহে মানুষকে পাঠিয়ে কার্যত তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছিল বিজ্ঞান। অন্যদিকে তাদের টেক্কা দিতে মরণপণ পরিশ্রম করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, ছয়ের দশক শেষ হওয়ার আগেই চাঁদের মাটিতে পা পড়বে মানুষের। ফেলবে যুক্তরাষ্ট্র।
দিন বদলেছে, যুগ বদলেছে। সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই। মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়া যদিও এখনও শীর্ষে। তাদের সয়ুজ রকেটকে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ মানুষবাহী মহাকাশযান। অথচ সেই সোভিয়েত দাপটের বেশিরভাগটাই যেন নেই। সবটা চলে গিয়েছে আটলান্টিকের ওপারে। নাসার পাশাপাশি এবার তরতরিয়ে এগোচ্ছেন ইলন মাস্ক। চাইছেন, মঙ্গলে উপনিবেশ গড়বেন। কিন্তু তার পাশাপাশি এক নতুন খেলোয়াড় নেমেছেন মাঠে। প্রায় নিঃসাড়ে বলা যায়। কিন্তু প্রবলভাবে। হিমালয়ের ওপারে, হোয়াংহো, ইয়াংসি নদীর ধারেও এবার মহাকাশ সভ্যতার নব সূচনা হয়েছে।
ভূরাজনীতির নানা অঙ্কে গোটা এশিয়া, আফ্রিকা ও প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে কার্যত নিরঙ্কুশ শাসন করতে চাইছে চীন। রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন, যা মাথাব্যথা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির। পাশাপাশি, চিন্তায় হোয়াইট হাউসও। সেই লক্ষ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে চলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার মহাকাশেও চলে এল চীনা সাফল্য। ‘আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন’ বা আইএসএসের পাশাপাশি, চীন নিজেদের স্পেস স্টেশন ‘তিয়াংগং’ বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
বস্তুত, মহাকাশে নিজেদের স্পেস স্টেশন বা মহাকাশ কেন্দ্র বানানো নিয়ে অনেক দেশেই গবেষণা চলছে। তাতে রয়েছে ভারতও। এমনকি আইএসএস বা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের আয়ুও আর বেশিদিন নেই। ফলে ২০১১ সাল থেকেই চীন ‘তিয়াংগং-১’ নামের একটি ‘প্রোটোটাইপ’ বানিয়ে মহাকাশে ছাড়ে। লং মার্চ সিরিজের রকেটে চড়ে তাতে যান একাধিক চীনা মহাকাশপচারী। ছিলেন দু’জন মহিলাও। লিউ ইয়াং ও ওয়াং ইয়েপিং। দুজনেই চীনা যুদ্ধবিমানের পাইলট!
চীনে মহাকাশপচারীদের বলে ‘তাইকোনাট’। এবার চীনের পরিকল্পনায় রয়েছে চাঁদ। নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক সূত্রের খবর, এই বিষয়ে জোরকদমে পরিকল্পনা চালাচ্ছে চীন। লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে চাঁদের মাটিতে চীনা তাইকোনাটদের অবতরণ করানো।
এতদিন পর আমেরিকা আবার পরিকল্পনা করছে চাঁদে মানুষ নামানোর। বস্তুত, চাঁদে প্রথমবার কোনও মহিলার পা পড়ুক, চাইছে নাসা। তাদের এই নতুন মিশনের নাম ‘আর্টেমিস’। ইতিমধ্যেই তার পরিকল্পনা প্রায় শেষ পর্যায়ে। নাসা ছাড়াও জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’, ইলন মাস্কের ‘স্পেস এক্স’, ‘বোয়িং’, ‘লকহিড মার্টিন’-সহ একাধিক বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন সংস্থা হাত মিলিয়েছে এই প্রকল্পে। এদিকে চীন কার্যত একা। ইতোমধ্যেই তাদের তিয়াংগং স্পেস স্টেশন, আয়তনে যা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের তিন ভাগের এক ভাগ, তা সফলভাবে কক্ষে রয়েছে। দেখেশুনে রাজনীতিতে বলাবলি চলছে, এ যেন সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরের মহাকাশ-যুদ্ধ ফিরে এল বিশ্ব। শুধু রাশিয়ার জায়গা নিয়েছে চীন। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা
এনবিএস/ওডে/সি


