মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকিতে ইরানের সঙ্গে পাকিস্তানের গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প ত্যাগ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে পাকিস্তান ইরানের সাথে তার প্রধান গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে। গত এক দশক ধরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দুটি দেশ শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হল। মিডিল ইস্ট মনিটর

পাকিস্তানের ডন সংবাদপত্রের মতে, দেশটির পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী ডঃ মুসাদিক মালিক জাতীয় পরিষদে লিখিত সাক্ষ্যে বলেছেন যে, ‘পাকিস্তান গ্যাস বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তির (জিএসপিএ) অধীনে ইরানকে একটি ‘ফোর্স ম্যাজিউর এবং এক্সকিউজিং ইভেন্ট নোটিশ’ জারি করেছে। তাতে এ প্রকল্প থেকে সরে আসার কথা বলা হয়েছে। 

এ পাইপলাইনের লক্ষ্য ছিল ইরান প্রতিদিন পাকিস্তানে ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে। ইরানের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রকল্পটি স্থবির হয়ে পড়ে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেই এধরনের প্রকল্প আবার চালু হবে এবং আর হুমকি হবে না মনে করে দুটি দেশ এ নিয়ে উদ্যোগ অব্যাহত রাখে। 

এছাড়া এই বছরের শুরুর দিকে, ইরান পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে বলে যে যদি ইসলামাবাদ পাইপলাইন চুক্তি অনুসারে তার দিকটি সম্পূর্ণ করতে এবং ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে চুক্তিটি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাকে ১৮ বিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে হবে।

পাকিস্তানের প্রতিমন্ত্রী মালিক অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, ইরান যদি পাকিস্তানের নোটিশ গ্রহণ না করে তবেই আন্তর্জাতিক সালিশির মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যেতে পারে।

ইরান ও পাকিস্তান যৌথ সীমান্ত বাজার, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করলেও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞার কারণেই শেষ পর্যন্ত আগাতে ব্যর্থ হল। পাকিস্তানের ফোর্স ম্যাজিউর নোটিশটি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানের দেশটি সফরের এক সপ্তাহ পরে আসে, যেখানে তিনি এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন যা উভয় দেশের জন্য উপকৃত হবে। তিনি তার পাকিস্তানি সমকক্ষ বিলাওয়াল ভুট্টোর সাথে তাদের মধ্যে বিদ্যমান আর্থিক সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান নিয়েও আলোচনা করেন।

পাকিস্তানের বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে, ২৪০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের দেশটি প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘন্টা এবং কখনও কখনও আরও বেশি সময় ব্ল্যাকআউটের অভিজ্ঞতা লাভ করে, যা পাকিস্তান সরকারের জন্য গ্যাস এবং বিদ্যুতের সংকট মোচনে জালানি সরবরাহকে একটি প্রধান অগ্রাধিকার করে তোলে।

ইরান পাকিস্তানে গ্যাস সরবরাহের জন্যে  শত শত কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করে প্রকল্পের তার দিকটি সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু পাকিস্তান দীর্ঘকাল ধরে তার ব্যাপক অর্থনৈতিক সংগ্রাম এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হুমকির কারণে এ গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ থেকে পিছুটান দিল। 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনকে নিষেধাজ্ঞা ও ব্যবস্থা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে যাতে এটি পাইপলাইন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার অনুমতি দেয়। মার্কিন সরকার যেমন ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে আঘাত হানা মারাত্মক ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে মানবিক ত্রাণ-সম্পর্কিত বাণিজ্যকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছে, পাকিস্তানও একইভাবে ইরান থেকে তার শক্তি সরবরাহের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার ছাড় চাইতে পারে।

পাকিস্তানের প্রতিমন্ত্রী মালিক বলেন, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ইরানের সঙ্গে পাইপলাইন নির্মাণের বহু চেষ্টা চালিয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের ওইসব চাপাচাপি সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ওয়াশিংটন মানবিক ও শক্তির ভিত্তিতে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবুজ আলো না দেয়ায়, ইসলামাবাদ তেহরানের দ্বারা আরোপিত যেকোনো জরিমানা প্রদান করবে।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা  

এনবিএস/ওডে/সি

news