২৪ ঘণ্টার কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনিক শাটডাউন! বন্ধ হতে পারে ৪০ লাখ কর্মীর বেতন

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে অর্থায়ন করার যে বিল আনা হয়েছিল, কট্টরপন্থী রিপাবলিকানরা তা বাতিল করেছে। ফলে এটা এখন নিশ্চিত যে রোববার বা ১ অক্টোবর থেকে দেশটির কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে, যাকে বলে শাটডাউন। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে বন্ধ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারকে তহবিল যোগানোর মেয়াদ ৩০ দিন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিল আনা হয়েছিল হাউসে। কিন্তু সেই বিল ২৩২-১৯৮ ভোটে পরাজিত হয়। বিলে রিপাবলিকানদের পছন্দ অনুযায়ী ব্যয় হ্রাসের পাশাপাশি অভিবাসন সীমিত করার প্রস্তাব ছিল। একই কারণে ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত সিনেটে এটি পাস হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল খুবই কম।

হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও সেখানে এই বিল পাস না হওয়ার কারণে এখন শাটডাউন এড়ানোর পথ নেই বলেই মনে হচ্ছে। এতে জাতীয় পার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ৪০ লাখ কেন্দ্রীয় কর্মীর বেতন-ভাতা পরিশোধ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যেতে পারে আর্থিক খাতের নজরদারি থেকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার তহবিল।

ভোটাভুটির পর হাউসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি বলেন, যেসব রক্ষণশীল নীতির কারণে ডেমোক্রেটরা বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন, সেগুলো ছাড়া এই তহবিলের মেয়াদ সম্প্রসারণের বিল এখনো পাস হতে পারে। কিন্তু এরপর কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলতে তিনি রাজি হননি। হাউস স্পিকার ম্যাককার্থি বলেন, হাল ছেড়ে দেওয়াই কেবল ব্যর্থতা।

এদিকে সিনেট আবার সময়মতো কাজ করবে কি না, তা পরিষ্কার নয়। আজ শনিবার বিকেলে সিনেটে দ্বিদলীয় বিল উত্থাপিত হওয়ার কথা, যেখানে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত এই সরকারকে তহবিল জোগানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়াগত বাধার কারণে আগামী মঙ্গলবারের আগে চূড়ান্ত ভোট নাও হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেছেন, সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিশুদের জন্য পরিচালিত কর্মসূচির গতি কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে থমকে যেতে পারে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পের গতিও।

এবারও শাটডাউন হলে তা হবে এক দশকের মধ্যে চতুর্থ শাটডাউন। মাত্র চার মাস আগে জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে দেশটির প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যেভাবে পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল, তখনো এই শাটডাউনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তখন তা এড়ানো গেলেও এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানে প্রভাব পড়েছে, ক্ষুণ্ন হয়েছে দেশটির ভাবমূর্তি।

সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য প্রতিবছর ১ অক্টোবর নতুন অর্থ বছরের অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ কংগ্রেস। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণে থাকা কংগ্রেস অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি আটকে রেখেছে।   প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির কাছে তারা দাবি করেছে, সরকারি ব্যয় অনেকাংশে হ্রাস করতে হবে। তবে তারা নতুন অর্থ বছরের অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দেবে।

আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ সিনেটে মাত্র ১ আসনের ব্যবধানে এগিয়ে আছে ডেমোক্রেটিক পার্টি। অপরদিকে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে রিপাবলিকানদের দখলে। ফলে সরকারকে সচল রাখতে হবে দুই দলকেই ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে।

অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে দুই দল একমতে না পৌঁছাতে পারে তাহলে অচল হয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বেশিরভাগ সরকারি চাকরিজীবীকে বেতন ছাড়া বাধ্যতামূলককে ছাঁটাই করা হবে। এমনকি পুষ্টি প্রোগ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।

রিপাবলিকানদের একটি বিদ্রোহী অংশ দাবি জানিয়েছে, সরকারি ব্যয় অনেক কমাতে হবে। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িত ইউক্রেনকেও সহায়তা কমিয়ে দেওয়ার দাবি করছেন তারা।

news