গাজা শহর ঘিরে ফেলার দাবি ইসরায়েলের, সেনাদের কালো ব্যাগে ভরে ফেরত পাঠানো হবে বলছে হামাস

 ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা শহর ঘেরাও করার দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের দাবি, গাজা উপত্যকার প্রধান এই শহরটিকে বৃহস্পতিবার ঘিরে ফেলা হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সেখানে মূলত সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে হামলা শেষে আবারও সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ছেন হামাসের যোদ্ধারা। বিবিসি/টাইমস অব ইসরায়েল

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত গাজা শহরটি বর্তমানে ইসরায়েলের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েল সেখানে হামাসের কমান্ড কাঠামোকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডের দক্ষিণ অংশে পালিয়ে যেতে বলেছে।

রয়টার্স বলছে, গাজায় প্রবল বিস্ফোরণের মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘হামাসের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু গাজা শহর ঘেরাও সম্পন্ন করেছে তাদের সৈন্যরা।’

অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক প্রকৌশলীদের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইদ্দো মিজরাহি বলেছেন, ইসরায়েলি সেনারা মাইন এবং বুবি ফাঁদের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘হামাস এসব বিষয়ে বেশ শিখেছে এবং নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করেছে।’

এছাড়া ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় বর্তমানে যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছেন তারা। ইসরায়েলি সেনারা গাজার মধ্যাঞ্চল ও সবচেয়ে জনবহুল এলাকা গাজার ভেতর প্রবেশ করেছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যুদ্ধের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। আমরা বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছি এবং গাজার উপকণ্ঠ পার করে ভেতরে প্রবেশ করেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে হামাসের যোদ্ধারা তাদের গোপন সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে ইসরায়েলি সেনাদরে ওপর মর্টার হামলা চালাচ্ছেন। হামলা চালিয়ে আবার সঙ্গে সঙ্গে সুড়ঙ্গের ভেতর চলে যাচ্ছেন তারা। গাজার কয়েকজন বাসিন্দার বক্তব্য এবং হামাস ও ইসরায়েলের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।

গাজার এক বাসিন্দা রয়টার্সকে পরিচয় গোপন রাখার শর্ত বলেছেন, গাজা সিটিকে কেন্দ্র করে বিরামহীন বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। যেন তাদের স্থল সেনারা সেখানে সহজে ঢুকে পড়তে পারেন। কিন্তু তবুও ইসরায়েলিরা এখনও গাজা সিটির ভেতর ঢুকতে পারেননি।

গাজা ভূখণ্ডের বুরেজ শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। শিবিরের একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলার পর প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে।

এছাড়া বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন বলেও জানানো হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে গাজার শরণার্থী শিবিরে তৃতীয় দফায় হামলার ঘটনা ঘটল। বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বৃহস্পতিবার মধ্য গাজার এই শিবিরে আবাসিক ভবনে হামলা চালানো হলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু লোক আটকে থাকার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা।

হামলায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমি এবং আমার পরিবার বসে ছিলাম, হঠাৎ আমরা বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাই। আমাদের চারপাশে সবকিছু যেন উড়ছিল। আমরা ধুলো আর ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাইনি। ব্যাপক হামলা হয়েছে... এক সেকেন্ডের মধ্যেই যেন পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় এখন পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং গাজার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, এ ধরনের ‘নির্বিচার হামলা’ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাদের কালো ব্যাগে করে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা এক টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলকে এই হুমকি দেন।

হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, গাজায় ইসরায়েলি সেনা নিহতের যে সংখ্যা ইসরায়েলের সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। ইসরায়েল বলেছে, গত শুক্রবার গাজায় স্থল অভিযান সম্প্রসারিত করার পর থেকে তারা ১৮ জন সেনা হারিয়েছে।

 ইসরায়েলের উদ্দেশে হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, ‘ তোমাদের সেনারা কালো ব্যাগে করে ফিরবে।’সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news