কেন ফিলিস্তিনের নিজস্ব সেনাবাহিনী নেই?

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা সরকার-স্বীকৃত নয়। ফিলিস্তিনের সরকারি ভাবে কোনও সেনাবাহিনীই নেই। হামাসের দাবি, দেশকে বাঁচাতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে তারা। ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াসের আরাফাত ইসরায়েলের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন দেশের প্রতিরক্ষার জন্য কোনও সেনাবাহিনী রাখতে পারে না।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের কোনও সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠলে সেখানকার সরকার নিজেই সেই বাহিনীকে ইসরায়েলের হাতে তুলে দেবে। এর অন্যথায় ইসরায়েল ফিলিস্তিন আক্রমণ করবে। ফিলিস্তিন লিবারেশন অরগানাইজেশন বা পিএলও-র অধীনে অতীতে ছিল ফিলিস্তিন লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। তারাই ছিল দেশের সামরিক বাহিনী। কিন্তু তা ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মধ্যে যে অস্ত্র চুক্তি হয়, তাতে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্যই ছিল ফিলিস্তিনকে নিরস্ত্র করে দেওয়া।

অস্ত্র চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিন সরকার তাদের দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আধা সামরিক বাহিনী গঠন করতে পারবে। কিন্তু পুরোদস্তুর সামরিক বাহিনী তারা রাখতে পারবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে যে আধা সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিন গঠন করবে, তার উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বাহিনীর পরিসীমা বেঁধে দেয় ইজ়রায়েল। ঠিক হয়, এই বাহিনীর গতিবিধি, অস্ত্রবহন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েলই।

ফিলিস্তিনের পুলিশ বাহিনীতে কারা নিযুক্ত হবেন, কারা তার মাথায় বসবেন, তা নির্ধারণের ভারও নিজের হাতে নিয়ে নেয় ইসরায়েল। ফলে এই বাহিনীও প্রকারান্তরে চলে যায় ইসরায়েলের হাতেই। ফিলিস্তিনের পুলিশ বাহিনীর নাম প্রথমে ছিল ন্যাশানাল সিকিউরিটি ফোর্স বা জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। পরে নাম বদলে দেওয়া হয় ফিলিস্তিনি সিকিউরিটি ফোর্স বা ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীতে। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত সকলেই এই বাহিনীর অন্তর্গত।

গাজায় সমুদ্র উপকূল পাহারা দেওয়ার জন্য নৌসেনা থেকে শুরু করে দেশের পরিবহণ পরিচালনার জন্য ট্র্যাফিক পুলিশ, এই বাহিনীরই অঙ্গ। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চুক্তির শর্তকে কাজে লাগিয়ে এই বাহিনীকে তারা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেছে একাধিক বার।

২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়লাভ করে হামাস। তারা ক্ষমতায় আসার পর তাদের নিজস্ব সরকারি বাহিনী গড়ে তুলেছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল এগ্জিকিউটিভ ফোর্স। পরে হামাস ক্ষমতাচ্যুত হলে এই বাহিনী ভেঙে যায়। ফিলিস্তিনে সক্রিয় একটি সশস্ত্র বাহিনীর নাম ইজ-আদ-দিন-আল-কাসাম ব্রিগেড। এটি মূলত হামাসের সামরিক শাখা। ১৯৯০ সালে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়েছিল। হামাসের শক্তির অন্যতম উৎস এই বাহিনী।

হামাসের দাবি, ফিলিস্তিনকে ইহুদি আগ্রাসনমুক্ত করতে কাজ করে তারা। গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সদস্যদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করে। তবে ইসরায়েল, আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়া এই সংগঠন এবং তার বাহিনীকে সন্ত্রাসবাদীর তকমা দিয়েছে। হামাসকে অর্থনৈতিক দিক থেকে সাহায্য করে ইরান। হামাসের কাছে তারা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করে বলেও শোনা যায়। এ ছাড়া, ইসরায়েলের অভিযোগ, চীন এবং উত্তর কোরিয়া থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে হামাস।

হামাস ছাড়াও ফিলিস্তিনে ছোট ছোট কিছু সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে। যারা প্রত্যেকেই ফিলিস্তিনের ‘স্বাধীনতা’র জন্য কাজ করে। এগুলির সরকারি স্বীকৃতি নেই। তাই ফিলিস্তিনি সামরিক বাহিনী এদের বলা যায় না।সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news