গাজার দক্ষিণ অঞ্চল দখলে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, জেনিনে হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ

ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, গাজাকে দখল করে নিতে পারে ইসরায়েল। সেভাবেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পশ্চিমা দেশ থেকে শুরু করে জাতিসংঘ বা অনেক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তা কানেই তুলছে না ইসরায়েল।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে গাজায় ইসরাইলের খুবই শক্তিশালী বাহিনী বহাল থাকবে। সেখানে শূন্যস্থান রাখা যাবে না। গাজাকে আবার ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানা হতে দিতে পারে না কেউ। যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন সেখানকার নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরায়েল।

ইউএন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম সতর্ক করেছে যে গাজার লোকেরা ‘অনাহারের তাৎক্ষণিক সম্ভাবনার’ সম্মুখীন হচ্ছে কারণ জ্বালানির ঘাটতি খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণকে বিকল করে দিচ্ছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে আল-শিফা কমপ্লেক্সের কাছে সৈন্যরা ৭ অক্টোবর অপহৃত ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত না জানিয়ে ইহুদিত ওয়েইসকে হামাস হত্যা করেছে।

দক্ষিণ গাজার বৃহত্তম শহর খান ইউনিসের পূর্বে বুধবার চারটি সম্প্রদায়ের উপর লিফলেটগুলি ফেলে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সেখানে বসবাসকারী লোকজনকে ‘পরিচিত আশ্রয়ের দিকে যেতে’ সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘনবসতিপূর্ণ ছিটমহলে কিছু নিরাপদ স্থান বাকি আছে।

ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, গাজার দক্ষিণে ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই খারাপ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে। অবরুদ্ধ অঞ্চলের মধ্যে, গাজাবাসীরা ‘অনাহারের অবিলম্বে সম্ভাবনার’ সম্মুখীন হচ্ছে কারণ জ্বালানির ঘাটতি খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণকে বিকল করে দিচ্ছে।

আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেছেন বাস্তুচ্যুত শিশুদের সুবিধাটিতে কোনও পানি বা দুধ ছাড়াই রেখে দেওয়া হয়েছে। গাজা শহরের আল-আহলি ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালের অভ্যন্তরে চিকিৎসকরা বলছেন এলাকায় তীব্র লড়াইয়ের কারণে তারা আহতদের কাছে পৌঁছাতে অক্ষম।

ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে এবার একটি হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েল। এছাড়া সেখানকার দুজন চিকিৎসককেও আটক করেছে ইসরায়েলি সেনারা। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ২৬টির কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।

জেনিনের ইবনে সিনা হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে বলে ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা রিপোর্ট করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, অ্যাম্বুলেন্স তল্লাশি চালায় এবং লাউডস্পিকারের মাধ্যমে হাসপাতালটি খালি করার নির্দেশ দেয়।

আল জাজিরা বলছে, চিকিৎসকদের তাদের হাত উঁচু করে এই হাসপাতালটি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং হাসপাতালের আঙিনাতেও তল্লাশি করা হয়েছে। এর আগে রাতের আঁধারে ইসরায়েলি বাহিনী জেনিন শহর ও জেনিন শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে সাতজনকে গ্রেপ্তার করে এবং এলাকার বহু রাস্তা ভেঙে দেয়।

গাজায় স্থল অভিযানে এ পর্যন্ত ৫১ জন ইসরাইলি সেনা নিহত হলো বলে ইসরাইলের সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। তবে ফিলিস্তিনের হামাস বলেছে, ইসরাইল তাদের সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে না। তাদের ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি ইসরাইলি সেনার প্রাণহানি ঘটেছে বলে হামাস দাবি করেছে। গাজায় আরো ২ ইসরাইলি সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে দখলদার বাহিনী। নিহত সেনাদের নাম ক্যাপ্টেন আসাফ মাস্টার এবং ক্যাপ্টেন কেফির ইতজাক ফ্রাঙ্কো।

লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম বলেছেন, ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনি জনগণকে বহিষ্কারের চেষ্টা করে তাহলে স্বয়ং ইসরায়েল চিরদিনের জন্য মুছে যাবে। তিনি আরো বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল যে আগ্রাসন চালাচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য মার্কিন স্বার্থে হামলা করা উচিত।

এদিকে গাজার মসজিদগুলোর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া আরও ১৬২টি মসজিদ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মসজিদের বাইরে অন্যান্য ধর্মের পবিত্র স্থানেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এ পর্যন্ত তিনটি গির্জা ধ্বংস করা হয়েছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ যুদ্ধের জন্য ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস প্রস্তুত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়া। এমনকি হামাসের ক্ষমতা শত্রুর চেয়েও বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।

ইসমাইল হানিয়া বলেন, যদি শত্রুপক্ষ দীর্ঘ যুদ্ধ করতে চায়, তবে আমাদের লড়াইয়ের ক্ষমতা আমাদের শত্রুর চেয়েও দীর্ঘ এবং আমাদের প্রতিরোধই চূড়ান্তভাবে জয়ী হবে। তিনি ইঙ্গিত দেন, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ দলগুলো ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে কৌশলগত সংঘাতে লিপ্ত এবং শুধুমাত্র তারাই এতে বিজয়ী হবে।

বিশ্ব থেকে আবারও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। জ্বালানির অভাবে গাজার যত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সেগুলোর সব বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি টেলিকম সংযোগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান প্যালটেল। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news