গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ বিপর্যয়কর, চলছে সর্বাত্মক ইসরায়েলি হামলা

জল, স্থল ও আকাশপথে ৪২ দিন ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাসিন্দারা এর আগে কখনো এমন ধ্বংসকাণ্ড আর দেখেননি।

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এ কয় দিনে ১২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি শিশু। এই সময়ে দখলকৃত পশ্চিম তীরেও নিহত হয়েছেন প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি। আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে হাসপাতাল কিছুই ইসরায়েল বাহিনীর তাণ্ডব থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

ইসরায়েলি হামলায় বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার অর্ধেকই। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্ধেকের বেশি অবকাঠামো। বন্ধ হয়ে গেছে অর্ধেকের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থাও।


লিস্তিনের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগের তথ্যের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৪১ হাজারের বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজারের বেশি বাড়িঘর। সব মিলিয়ে গাজার অন্তত ৪৫ শতাংশ বাড়িঘর পুরোপুরি বা আংশিক ধসে গেছে।

ইসরায়েলের হামলার আগে গাজার বেইত হানুন শহরে বাসিন্দা ছিল অর্ধ লক্ষাধিক। ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে গত রোববার শহরটি পরিদর্শনে যান একজন ইসরায়েলি সাংবাদিক। তার বর্ণনায়, ‘শহরটিতে আর এমন একটি ভবনও দাঁড়িয়ে নেই, যেখানে কোনো মানুষ বসবাস করতে পারে।’

জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সমন্বয় কার্যালয় গত বুধবার জানায়, ইসরায়েলি হামলায় গাজার ২৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যাটা উপত্যকার মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ৬ লাখ ২৫ হাজার।

গত বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব বলছে, গাজা ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ২৬ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত জ্বালানিসংকটে গাজায় একের পর এক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম ও রক্তের তীব্র সংকট চলছে।

জ্বালানি না থাকায় গাজার প্রায় সব নলকূপ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক শরণার্থী সংস্থা। এতে দক্ষিণ গাজার ৭০ শতাংশ বাসিন্দা সুপেয় পানি পাচ্ছেন না। এ ছাড়া গাজার পয়োনিষ্কাশনের কাজে ব্যবহারের জন্য ৬৫টি পাম্প ছিল। এসবের বেশির ভাগই এখন অচল। এতে কিছু এলাকার সড়কে সড়কে পয়োবর্জ্য ভেসে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।

হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি জ্বালানি, পানি ও আটা-ময়দার সংকটে ৭ নভেম্বর উত্তর গাজার সর্বশেষ বেকারির দোকানও বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখানকার সবশেষ যে কারখানাটি এত দিন চালু ছিল, বুধবার ইসরায়েলের এক হামলায় সেটিও ধ্বংস হয়েছে। গাজায় খাদ্যসংকটের বর্ণনা দিতে গিয়ে জাতিসংঘ বলছে, ‘সার্বিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়কর।’

হামলা শুরুর আগে দৈনিক গড়ে ৫০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় ঢুকত। কিন্তু ৭ অক্টোবর থেকে গাজাবাসীর জন্য সব খাদ্যপণ্যের আমদানি বন্ধ। এর দুই সপ্তাহ পর অল্প পরিমাণ ত্রাণ ঢোকা শুরু করে। এরপর থেকে মোট ১ হাজার ১৩৯টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে গাজায়। ফলে সিংহভাগ বাসিন্দা অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news