গাজা যুদ্ধের মধ্যে জার্মানিতে এরদোগানের নিরুত্তাপ সফর

একেবারে নীরবে আয়োজন করা হয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগানের জার্মানি সফর। বার্লিনে তুরস্ক ও জার্মানির মধ্যেকার ফুটবল ম্যাচে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন এরদোগান ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ শোনা গিয়েছিল। শুক্রবার এরদোগানের জার্মানি সফর ছিল পুরোপুরি আলোচনার বাইরে। আর এর আসল কারণ হচ্ছে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত প্রশ্নে দুই নেতার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান।  

শুক্রবার যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে শুলজ ইসরায়েলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না। একই সময়ে জার্মানিতে ইহুদি গণহত্যার ইঙ্গিত করে এরদোগান বলেন, কারোর কাছে আমাদের দায় নেই, তাই আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। দায় থাকলে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারতাম না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট গাজায় হামলাার জন্য তীব্র সমালোচনা করে বলেন, শিশুদের ও হাসপাতালে হামলা চালানোর কোন কথা ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়নি।

এরদোগান ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় সমর্থন দেওয়ায় জার্মানিসহ দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

এরদোগান গাজায় যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দেন আর শুলজ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। চ্যান্সেলর শুলজের সঙ্গে ডিনার করবেন এরদোগান। দেখা করবেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ওয়াল্টারের সঙ্গেও। রুদ্ধদ্বার বৈঠকও হবে দু’টি। কিন্তু এসব নিয়ে কোথাও কোনো উত্তেজনা নেই।

জার্মান সরকার চাইছে, এরদোগানের এই সফর যত কম নজরে আনা যায় ততই ভালো। এরদোগান এমন সময় জার্মানি সফরে গেলেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ চলছে। নানা ইস্যুতেই বার্লিন ও আংকারা নিজেদের মুখোমুখি অবস্থানে আবিষ্কার করছে। জার্মান সরকারের মুখপাত্ররা তুরস্ককে প্রায়ই ‘কঠিন সহযোগী’ বলে আখ্যায়িত করছেন।

গত ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্কে দূরত্ব আরও বেড়েছে। জার্মানি একতরফাভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে এরদোগান ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছেন। গত এক মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের কট্টোর সমালোচক হয়ে উঠেছেন। তিনি ইসরায়েলে হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি হামাসকে তিনি ‘স্বাধীনতাকামী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অথচ জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

এরদোগান ইহুদি রাষ্ট্রটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি ‘ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হওয়ার কারণে দেশটির বৈধতা নষ্ট হয়ে গেছে। জার্মানির ইহুদি নেতারা অভিযোগ করেছেন যে, এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে এরদোগান মূলত ইহুদি বিদ্বেষকে ইন্ধন
দিচ্ছেন। তারা জার্মান সরকারের কাছে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সফর বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

অপরদিকে নিজেদের নাৎসি ইতিহাস নিয়ে লজ্জিত জার্মানি সবসময় ইসরাযেলকে সমর্থন দেয়াকে নিজের স্থায়ী নীতিতে পরিণত করেছে। শুলজ ও সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল উভয়ই বারবার ইসরায়েলের নিরাপত্তাকে সবার আগে স্থান দিয়েছেন। জার্মান নেতারা ইসরায়েলের প্রতি অটল সমর্থনের ধারণা প্রকাশ করতে বিশেষ একটি টার্ম ‘স্টাটস্রাসন’ ব্যবহার করেন। তবে গাজায় ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেই নীতি চাপের মুখে পড়ছে।

হামাসের আক্রমণের প্রাথমিক ধাক্কার পর, জার্মান মূলধারার মিডিয়াগুলোতে ক্রমবর্ধমানভাবে গাজার মানবিক দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই সেখানে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটেই জার্মানিতে সফরে গেলেন এরদোগান। এ সফরের সময় গাজায় চলমান সংঘাত সম্পর্কে যে কোনো ধরনের মন্তব্য এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তবে জার্মানি ও তুরস্কের একে অপরকে প্রয়োজন। জার্মানি তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। এ ছাড়া তুরস্কের বাইরে সবথেকে বেশি প্রায় ৩০ লাখ তুর্কি জার্মানিতে বাস করেন। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি

news