গঙ্গা চুক্তি নবায়ন নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা আলোচনায় পশ্চিম বঙ্গকে বাদ দেয়ায় ক্ষুব্ধ মমতা 

২২ জুন শনিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনায় ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরুর জন্য একটি ‘যৌথ কারিগরি কমিটি’ গঠনের ব্যাপারে সম্মত হন দুই দেশের সরকারপ্রধান। 

সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, ফারাক্কা চুক্তির এই আলোচনায় তাকে বাদ দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল এই ইস্যুতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভা অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করে বিজেপিবিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করতে পারে।

তৃণমূল বলছে, আগামী ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। সেখানে তার আগেই তড়িঘড়ি এই সমঝোতা কেমন করে হলো?

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দাবি, এই চুক্তি আবার বাস্তবায়িত হলে মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় বন্যা এবং ভাঙন দেখা দেবে। তাতে বাংলার বিপুল পরিমাণ গ্রামের মানুষ বিপদের মুখে পড়বে।

এনডিটিভি জানিয়েছে, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এমন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। এসব বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত নেয়া হয়নি বলে ‘বিরক্ত’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পশ্চিমবঙ্গের অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ফারাক্কা বাঁধ; যা দিয়ে গঙ্গার পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত হয় এবং হুগলি নদীতে পানি সরানো নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গঙ্গার পানি কলকাতা বন্দরের কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কলকাতাসহ হুগলি-ভাগীরথী নদীর তীরে শহুরে বসতিগুলোর পানির চাহিদা পূরণ করে। 

ভারতের এই গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাম হয়েছে পদ্মা। বাংলাদেশের উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রাণ-প্রকৃতির জন্য এই নদীর পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একইভাবে ভারতের জলপাইগুড়ি এলাকা দিয়ে লালমনিরহাট হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা তিস্তা নদী রংপুর অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিস্তার পানি ইস্যুতে চুক্তি এবং তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি কারিগরি দল পাঠানোর সিদ্ধান্তও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষুব্ধ করেছে। 

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হলে ভারতের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। সে বছর ১২ ডিসেম্বর উভয় দেশের নেতারা নয়াদিল্লিতে ৩০ বছরের একটি চুক্তি সাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ফারাক্কা থেকে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন হচ্ছে। পূর্ববর্তী ৪০ বছরের গড় মাত্রা অনুযায়ী ভারত গঙ্গার পানির ভাগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে যে কোনও সংকটের সময় বাংলাদেশকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি সরবরাহের গ্যারান্টিও দেয়া হয় এই চুক্তিতে।

তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্য সরকারও পক্ষ। কিন্তু নতুন সমঝোতার বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। যা অত্যন্ত খারাপ। এছাড়া এই চুক্তি বাবদ রাজ্য সরকারের যে পাওনা টাকা, তাও বকেয়া রয়েছে। গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। যা পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভাঙনের প্রাথমিক কারণ হয়ে উঠেছে। এবার বাংলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আরও বাড়লো।

কেন্দ্রকে এটা বুঝতে হবে, রাজ্য সরকার সহযোগিতা না-করলে তিস্তা পানি বণ্টনের মতো চুক্তি থমকে থাকে। ফারাক্কা ইস্যুতে তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রাখলো মমতার সরকার। সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া বাংলা

এনবিএস/ওডে/সি 

news