বেলুন বিতর্ক: নেপথ্যে ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পায়তারা
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাজেট ঘোষণার আগে চীনের গোয়েন্দা বেলুন নিয়ে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে যে, দেশ এখন অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে। “তথাকথিত গোয়েন্দা বেলূন” গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উপর দিয়ে ভেসে যাওয়ার পর সেটিকে জঙ্গী বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে। যুক্তরাষ্ট্র আরও দাবি করে যে এরপর তার আকাশ ও কানাডার আকাশ সীমায় আরও কয়েকটি তথাকথিত বেলুন বা অজ্ঞাত বস্তু (ইউএফও) দেখা গেছে ।
কোন নির্দিষ্ট দেশকে ইউএফওএর জন্য দোষারোপ করা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে সেগুলো গুলি করে ভূপাতিত করে যাচ্ছে। এতে এগুলোর উৎপত্তি নিয়ে রহস্য ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। উৎপত্তি কোথায় হয়েছে ও তার উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন ওয়াশিংটন তার সামরিক ব্যয় বাড়ানোর জন্য অজুহাত তৈরি করতে ক্রমবর্ধমান গণভীতির সঞ্চার, চীন ও রাশিয়ার সাথে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি এবং ওয়াশিংটনের মিত্রদেরকে তার প্রতি অনুগত থাকতে রাজী করানোর কাজ করছে। তাই ২০২৩ সালটি হতে যাচ্ছে এক সংঘাত-সংকুল বছর।
এর আগে এক নিবন্ধে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের মতো নন, তিনি তার চেয়ে অনেক মারাত্মক। ট্রাম্প ছিলেন একজন ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং তার মানসিক অবস্থার আলোকে তার কাজকর্ম লেনদেন ছিল, তার মূলে সমরবাদী কিছু ছিল না। চীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কারণে চীনকে অপছন্দ করতেন। এছাড়া তিনি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এসব বাস্তবসম্মত ও গতিশীল পদক্ষেপের কারণে সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রাম্পকে অবজ্ঞা করে এবং তারা সিরিয়া থেকে সম্ভাব্য সেনা প্রত্যাহার রোধ এবং ন্যাটো নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা থেকে তাকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে বাইডেন হলেন একজন উচ্চমানের সমরবাদী নয়ারক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট। তিনি বড় ধরণের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পথে পা দিয়েছেন। বাইডেন চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলেছেন এবং সম্ভব সব জায়গায় সামরিক জোট ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এ ধরণের নীতিগত সিদ্ধান্তে কত ব্যয় হবে তা নিয়ে তিনি সামান্যই চিন্তাভাবনা করে থাকেন। তার নেতৃত্ব ট্রাম্পের ঠিক উল্টো। ট্রাম্পের অন্তর্মুখী চিন্তা তার বক্তৃতায় প্রকাশ পেতো। তিনি সামাজিক মাধ্যমে তার কল্পনা, দম্ভোক্তি ও দুর্নাম নিয়ে প্রচারণায় মজা পেতেন। যেমন তিনি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনকে জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। বাইডেন সত্যিকারভাবে সামরিক সংকট সৃষ্টির দ্বিতীয় কোন চিন্তার অবকাশ দেন না এবং আলোচনা ছাড়াই মিত্রদের ওপর তা চাপিয়ে দেন।
তথাকথিত গোয়েন্দা বেলুন নিয়ে দুই প্রেসিডেন্টে কাজের ধারাও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসনকেও এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে কিন্ত তা জনসম্মুখে প্রচার করতেন না। বাইডেন প্রশাসন এটি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ এটিকে তিনি নাটকীয়ভাবে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা সৃষ্টি ও সামরিক বাজেট বাড়ানোর সোনালী সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন।
ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদের মাধ্যমে এটি করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে রিপাবলিকান দলের চীনবিরোধীদেরকে এর পক্ষে সমর্থন আদায়ে সম্মত করতে হবে। এর আগে এমনটি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ইউএফও দেখা নিয়ে যে হৈচৈ শুরু হয়েছে তা সায়েন্স ফিকশন সেনাদল হিসেবে ১৯৫০ এর দশকে জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘকাল আগে থেকে জানে যে, এলিয়েন যানগুলো পৃথিবীতে সফর করে থাকে। ১৯৪৭ সালে রোজওয়েল ঘটনা ও নাভাদায় “এরিয়া ৫১” এর মতো এ ধরণের ঘটনা সম্পর্কে বহু তত্ত্ব ও জল্পনকল্পনা প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু হতাশাজনক বাস্তবতা হচ্ছে যে, এসবই পুরোপুরি কল্পকথা হওয়ার পরও স্নায়ু যুদ্ধের সময় এর রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয় ছিল। সুনিশ্চিতভাবে একে সামরিক উদ্দেশ্য সাধনে কাজে লাগানো হয়েছে।
ইউএফও দেখার সংখ্যা বাড়ছে -পেন্টাগণ
১৯৫০ ও ৬০ এর দশক ছিল মহাশুণ্য আবস্কার এবং নতুন নতুন রকেট ও রকেট প্রযুক্তি আবিস্কারের ঐতিহাসিক যুগ। মানুষ এ ঘটনাক উৎসাহ নিয়ে বিস্ময়কর আবিস্কার ও অবস্থা দেখতে থাকে। এর সাথে যুক্ত ছিল নানা সামরিক গোপনীয়তা।এখন ইতিহাসের পুনরাবৃতি ঘটছে।
মার্কিন সরকার প্রাথমিকভাবে জনগণের মধ্যে চীন-রাশিয়া সম্পর্কে ভীতি সঞ্চার করতে চাচ্ছে। তারা বুঝাতে চাচ্ছে যে, এসব উডন্ত বস্তুতে গোপন ও রহস্যময় বস্তগুলোর গোয়েন্দা কার্যক্রম চালানোর ক্ষমতা আছে। এতে আমেরিকার আকাশ সীমা লংঘিত হচ্ছে। তাই সামরিক বাজেট বৃদ্ধিতে করদাতাদের অর্থ ব্যয় যথার্থ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। দেশটি রাশিয়াকে তার সীমান্তের কাছে ধ্বংস করার চেষ্টা করেই ক্ষ্যান্ত দিচ্ছে না। তারা নিজ স্বার্থে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নাটকীয় উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য নতুন মিত্র জোট গঠনসহ সব ধরণের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটির সংখ্যা বাড়াচ্ছে এবং অঞ্চলটিকে “ন্যাটোকরণ” করতে চাচ্ছে।
এনবিএস/ওডে/সি


